বিয়ার পান করলেই কি মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়? উত্তর খুঁজতে মিউজিক ফেস্টিভ্যালে বিজ্ঞানীরা
মশার কাছে কোনো সঙ্গীত উৎসব যেন ভোজন উৎসবের মতো। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, উৎসবে অংশ নেওয়া সবার সমানভাবে মশার কামড় খাওয়ার ঝুঁকি নেই।
প্রি-প্রিন্ট ওয়েবসাইট (bioRxiv) বায়োআরএক্সআইভি-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, কিছু আচরণ যেমন বিয়ার পান, সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা বা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের কারণে কিছু মানুষ মশার জন্য বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। গবেষণাটির এখনও পিয়ার-রিভিউ না হলেও এটি এখন পর্যন্ত এ ধরনের সবচেয়ে বড় গবেষণা যেখানে পরিচ্ছন্নতা ও নেশাগ্রস্ততার মতো বিষয়গুলোর প্রভাব যাচাই করা হয়েছে।
মশা মানুষের নিঃশ্বাসে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, শরীরের তাপমাত্রা ও গন্ধে আকৃষ্ট হয়। আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ত্বকে জীবাণুর বৈচিত্র্যতা কিংবা জেনেটিক কারণে মশার কামড় খাওয়ার মাত্রা প্রভাবিত হতে পারে। তবে আসল কারণ এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
শুধু চুলকানি এড়ানোর জন্য নয়, প্রাণঘাতী রোগ থেকে সুরক্ষার জন্যও মশার প্রতি আকর্ষণ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, মশা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসের মতো রোগ ছড়িয়ে তারা মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি তৈরি করে।
রাদবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের জীববিজ্ঞানী ও গবেষণার সহলেখক সারা লিন ব্লাঙ্কেন বলেন, 'আমরা যখন ম্যালেরিয়া বা মশা নিয়ে গবেষণার কথা বলি, অনেকে বলেন, "আমাকে সবসময় কামড়ায় কেন?"—এটা মানুষের বড় কৌতূহলের বিষয়, বিশেষত গ্রীষ্মকালে।'
মিউজিক ফেস্টিভ্যালে গবেষণা
মশা আকর্ষণের কারণ খুঁজতে গবেষকরা গিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিডিংহুইজেন অঞ্চলের লোল্যান্ডস মিউজিক ফেস্টিভ্যালে। ২০২৩ সালের আগস্টে সেখানে তারা শিপিং কন্টেইনারে অস্থায়ী ল্যাব স্থাপন করে তিন দিনের গবেষণা চালান।
অংশগ্রহণকারীদের ঘুম, গোসল, খাদ্যাভ্যাস, রক্তের গ্রুপ ও নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নোত্তর করা হয়। তাদের রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা পরিমাপ করা হয় ও ত্বকের নমুনা নেওয়া হয়। এরপর প্রত্যেকে মশা-ভর্তি খাঁচার পাশে হাত রাখেন। সেসময় ক্যামেরায় মশার চলাচল রেকর্ড করা হয়।
গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৬৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যারা গত ১২ ঘণ্টায় বিয়ার বা ওয়াইন পান করেছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ক্যানাবিস [মারিজুয়ানা] ব্যবহার করেছেন, সানস্ক্রিন ব্যবহার করেননি কিংবা একসঙ্গে বেড শেয়ার করেছেন, তাদের দিকে মশা বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। পারফিউমের প্রভাব পাওয়া যায়নি। তবে স্ট্রেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া যাদের ত্বকে বেশি ছিল, তারাও মশার কাছে বেশি আকর্ষণীয় ছিলেন।
বিয়ারেই কি মূল আকর্ষণ?
গবেষকরা বলছেন, উৎসব কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ নয়, ফলে ফলাফলকে সতর্কভাবে দেখা দরকার। মশারা সেখানে কেবল গন্ধ পেয়েছিল, কামড়াতে পারেনি। তাছাড়া অংশগ্রহণকারীরা তরুণ হওয়ায় অ্যালকোহল ও নেশা দ্রব্যের ব্যবহার সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি ছিল।
তবু গবেষণার ফল আগের ধারণাকে সমর্থন করে যে, গন্ধ, ত্বকের জীবাণু ও অ্যালকোহল মশাকে আকর্ষণ করতে পারে। সানস্ক্রিনে থাকা তেল বা গন্ধ মশা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। বিয়ারের ক্ষেত্রে প্রভাব বেশ জটিল। অ্যালকোহল শরীরের তাপমাত্রা বা কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বাড়াতে পারে। আবার নাচ-গান ও ঘামে ভেজা শরীরও মশার জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
ডিউক ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ গবেষক ওয়েন্ডি ও'মিয়ারা বলেন, 'খাদ্যাভ্যাস বা রক্তের গ্রুপের প্রভাব দেখা যায়নি। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা কঠিন।'
গবেষণায় ব্যবহৃত অ্যানোফেলিস স্টেফেন্সি (Anopheles stephensi) প্রজাতির মশা দক্ষিণ এশিয়া, আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। তবে প্রজাতিভেদে আকৃষ্ট হবার কারণ ভিন্ন হতে পারে।
গবেষকদের মতে, কেবল বিয়ার বা বিছানাসঙ্গী এড়ালেই মশার কামড় এড়ানো সম্ভব নয়। সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো লম্বা হাতার পোশাক পরা ও রিপেলেন্ট [মশার স্প্রে] ব্যবহার করা।
ব্লাঙ্কেন বলেন, 'যদি মশার কামড় এড়াতে চান, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজেকে তাদের জন্য অপ্রাপ্য করে তোলা।'
