চিনিযুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল ও তামাকের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

দীর্ঘস্থায়ী জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় কর আরোপের পক্ষে নিজেদের সবচেয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি আগামী ১০ বছরের মধ্যে কর আরোপের মাধ্যমে চিনিযুক্ত পানীয়, অ্যালকোহল ও তামাকের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যানসারের জন্য দায়ী এসব পণ্যের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে, তেমনই এমন এক সময়ে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করবে যখন উন্নয়ন সহায়তা কমছে এবং সরকারি ঋণ বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ প্রমোশন অ্যান্ড ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক জেরেমি ফারার বলেন, 'স্বাস্থ্য-কর আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ারগুলোর একটি। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।'
সেভিলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সম্মেলনে 'থ্রি বাই থার্টিফাইভ' (3 by 35) নামে এ উদ্যোগ চালু করেছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে স্বাস্থ্য-কর আরোপের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের এই কর উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রাজস্ব আয় হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক দশক ধরেই তামাকের ওপর কর আরোপ ও দাম বাড়ানোর পক্ষে কথা বলে আসছে। পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয়ের ওপরও করের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এই প্রথম সংস্থাটি তিনটি পণ্যের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সম্মেলনে বলেন, এই কর সরকারগুলোকে 'নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে' এবং সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নিজেদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
সংস্থাটির স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ গুইলারমো স্যান্ডোভাল উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই উদ্যোগের অর্থ হলো, একটি মধ্যম আয়ের দেশের সরকারকে কর বাড়িয়ে কোনো পণ্যের দাম বর্তমানের ৪ ডলার থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০ ডলারে উন্নীত করতে হবে, যেখানে মূল্যস্ফীতিও বিবেচনায় রাখা হবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রায় ১৪০টি দেশ ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তামাকের ওপর কর বাড়িয়ে দাম গড়ে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে।
স্যান্ডোভাল বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপরও কর আরোপের সুপারিশ বিবেচনা করছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সংস্থাটি এ ধরনের খাবারের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতগুলো থেকে প্রতিরোধের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সহায়তা কমানোর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সেভিলের এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি। তাছাড়া দেশটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছে।