ঢাকার সড়ক থেকে পুরোনো বাস অপসারণের সিদ্ধান্ত নিলে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসে: পরিবেশ উপদেষ্টা

ঢাকার রাস্তা থেকে ২৫ বছরের পুরোনো বাস অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে নানা দাবি আসে। আর সেই দাবি মানা না হলে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসে। এসব কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শনিবার (২৩ আগস্ট), মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মিলনায়তনে 'রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ ও পরিবেশগত কল্যাণ: একটি টেকসই ঢাকার পথে' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'সড়ক বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, পুরনো বাস ঢাকার রাস্তা থেকে সরে যাবে। এখন পরিবহন মালিকদের আবদার হচ্ছে, ২৫ বছরের বাসকে পুরনো বাস না বলে সেটাকে ৩০ বছর বলতে হবে। আর সেটা মানা না হলে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। ঠিক যেভাবে পাথর তোলা বন্ধ করার কথা বলার পরে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন লোক বা নতুন প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি না। পুরনো লোক, পুরনো প্রতিষ্ঠান নিয়েই কাজ করছি। পুরনো লোক নিয়ে কাজ করার সময় নতুন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তারপরেও আমরা বলেছি, পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে বিআরটিএ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর একযোগে কাজ করছে।'
উপস্থিত সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা ঢাকার রাস্তায় এমন কোনো বাস দেখতে পান কি, যা থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে না? তাহলে এবার বলেন, আগামী ছয় মাসে আমি কয়টা বাস তুলব এবং সেগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা কীভাবে করব?'
তিনি আরও বলেন, 'পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে যেভাবে গোটা জাতি এক হয়েছিল, সেইভাবে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ির বিরুদ্ধেও আপনারা একসাথে কথা বলুন। আমাদের গাড়ি লাগবে, বাস লাগবে। কিন্তু কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি আমরা আমাদের রাস্তায় দেখতে চাই না। সরকার তার জায়গা থেকে আইন প্রয়োগের কাজটি করবে। আর এ কাজটি সরকারের জন্য সহজ হবে যখন এ ব্যাপারে জনমত গড়ে উঠবে।'
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে ঢাকার সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। সুরক্ষা কবচ না থাকায় মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। এজন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতেই হবে। ঢাকার জনসংখ্যা যেভাবে কমাতে চাচ্ছি সেভাবে হয়তো কমাতে পারব না। তবে এখানের জনসংখ্যা আর যেন না বাড়ে, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা সাভার, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ কে পরিকল্পিত নগর হিসাবে গড়ে তুলতে পারি। ভূমিদস্যুদের হাতে অমুক স্যাটেলাইট সিটি, অমুক স্যাটেলাইট টাউনশিপ না করে সরকার করতে পারে। সেই কাজটা আমাদেরকে আসলে করে যেতে হবে। আমরা ঢাকা শহরে অনেক আবাসন করেছি। তারপরেও যাদের রাস্তায় থাকার তারা রাস্তাতেই থাকে।'
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চট্টগ্রামের একটি খাস জমি দখলমুক্ত করার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামে একটি খাস জমি দখলমুক্ত করলাম, যার বাজার মূল্য প্রায় ১১৫৬ কোটি টাকা। জমিটি দখলমুক্ত করেও সারতে পারি নাই, সব বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা আবেদন করতেছেন। তারা এই জমিতে হাঁস-মুরগি চাষ করবে। শিল্পপতিরা হঠাৎ হাঁস-মুরগি কেন চাষ করবে?' এখন জমি উদ্ধার করা হচ্ছে এক চ্যালেঞ্জ এবং উদ্ধার করে ওটাকে টিকানো হচ্ছে আর এক চ্যালেঞ্জ। আরেকবার সবার হাত থেকে ওটাকে বাঁচানো হচ্ছে আর এক চ্যালেঞ্জ।'
'সরকার তো অবৈধ দখল থেকে এই জায়গাটা উচ্ছেদ করল। এখানে স্টেডিয়াম বানিয়েছিল, ট্রাক স্ট্যান্ড বানিয়েছিল। কেউ কখনো ভাবতে পারেনি, একজন নারী উপদেষ্টা এই জায়গাটা দখলমুক্ত করে ফেলবেন। এখন দখলমুক্ত করলাম আর আপনারা সবাই মিলে ওখানে হাঁস-মুরগি চাষ করবেন—তা তো হতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'পরিবর্তন শুধু সরকারের দিকে তাকালে হবে না, সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।'
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, 'সারাদেশের এক শতাংশ ভূমি রাজধানী ঢাকা ৩২ শতাংশ জনসংখ্যা ধারণ করে। দেশের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ যোগান দিয়ে চলছে এই শহর। ১৯৭৪ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিলো মাত্র ২ লাখ, যা ১৯৮১ এবং ১৯৯১ সালে যথাক্রমে ৩৫ এবং ৬৫ লাখে পৌঁছায়। ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে ২০২৩ সালে ঢাকার জনসংখ্যা পৌঁছায় ২ কোটিতে।'