বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ফ্রান্সে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ধর্মঘট

বাজেটে পরিকল্পিত কাটছাঁটের প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে ধর্মঘটে নেমেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষক, ট্রেনচালক, ফার্মাসিস্ট এবং হাসপাতালকর্মীরা। অংশ নেন বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। খবর বিবিসি'র
আয়োজকদের দাবি, ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে আয়োজিত এই ধর্মঘটে দশ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন।
তবে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য। লিয়ন, নঁত ও প্যারিসে পুলিশের সঙ্গে ধর্মঘটকারীদের সংঘর্ষ হয়। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে ধর্মঘটকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।
এর আগে বাজেট নিয়ে স্থানীয় পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করেন দেশটির সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। তার স্থলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের ঘনিষ্ঠ সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে নিয়োগ দিয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।
ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার গণপরিবহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্যারিসে অধিকাংশ মেট্রো লাইন বন্ধ ছিল। বড় শহরগুলোর সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন ধর্মঘটকারীরা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথ আটকে স্লোগান দেন। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক কর্মবিরতিতে অংশ নেন। ফার্মাসিস্টদের সংগঠন জানিয়েছে, ৯৮ শতাংশ ফার্মেসি বন্ধ ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশজুড়ে ৩০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
ইউনিয়ন নেতাদের দাবি, সরকারকে জনকল্যাণে ব্যয় বাড়াতে হবে, ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে হবে এবং বাইরু সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট বাতিল করতে হবে।

প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৬ বছর বয়সী আইটি কর্মী সিরিয়েল বলেন, 'ম্যাখোঁর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিও যেমন আমার পছন্দ নয়, তেমনি বাইরুর বাজেট পরিকল্পনাও নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি চাই সরকার জনকল্যাণ ও সংস্কৃতিতে আরও ব্যয় বাড়াক। যাদের বিপুল সম্পদ আছে, এতে হয়তো তাদের কর আরও বাড়াতে হতে পারে।'
দেশটির প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন সিজিটি -এর নেতা সোফি বিনে বলেন, 'আমাদের রাস্তায় টিকে থাকতে হবে—এভাবেই আমরা শক্তি সঞ্চয় করব এবং সরকার ও নিয়োগদাতাদের বাধ্য করব ধনীদের স্বার্থরক্ষাকারী নীতির অবসান ঘটাতে।'
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতায়ো বলেন, 'কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।'
তিনি পুলিশকে সামান্যতম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন।
বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবাউড (এলএফআই)-এর নেতা জ্যঁ-লুক মেলাংশঁ আন্দোলনকারীদের 'শৃঙ্খলাবদ্ধ' থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'সহিংসতা কেবল রেতায়োকেই উপকৃত করবে।'
গত সপ্তাহে 'ব্লোকোঁ তো' আন্দোলনের ডাকে দুই লাখের মতো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এতে দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
বাইরুর বাজেট প্রস্তাবে ৪৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর পরিকল্পনা ছিল। এ কারণেই তিনি সংসদে আস্থা ভোটে পরাজিত হন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী লেকর্নু এখনও জানাননি, তিনি বাইরুর পরিকল্পনা বহাল রাখবেন না বাতিল করবেন। তবে বিষয়টিতে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তবে একটি বিভক্ত সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সের মাথাপিছু সরকারি ঋণ ৫০ হাজার ইউরো ছাড়িয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
ইউনিয়ন নেতা আলেক্সান্দ্র দুবুয়া বলেন, 'অবশ্যই আমরা সরকারে স্থিতিশীলতা চাই, কিন্তু পেশাজীবীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক সাফল্যের লজিক থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।'