নতুন বোমারু বিমান নিয়ে বড় বাজি চীনের

চীনের সামরিক আধুনিকায়নের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাহিনী আধুনিক করারও তাগিদ বেড়েছে। এই আধুনিকায়ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রে আছে বোমারু বিমান বহরের সংস্কার। রাশিয়ার পুরানো টু–১৬ অনুকরণে তৈরি এইচ–৬ বোমারু বিমান দিয়ে বৈশ্বিক ক্ষমতা প্রদর্শন সম্ভব নয়- এটি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেও বোঝেন।
এই প্রেক্ষিতে চীন একই সঙ্গে দুই ধরনের নতুন বোমারু বিমানের উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে। প্রথমটি হলো আন্তঃমহাদেশীয় স্টেলথ বোমার এইচ–২০, এবং দ্বিতীয়টি হলো মধ্যপাল্লার স্টেলথ জেএইচ–এক্সএক্স। এ দুটি প্রকল্প ইঙ্গিত করে, চীন এখন প্রশান্ত মহাসাগরের সামরিক মানচিত্র নতুন করে আঁকতে এবং শক্তির ভারসাম্য নিজের পক্ষে ঘুরিয়ে নিতে চাইছে।
শিয়ান এয়ারক্রাফট করপোরেশনের তৈরি এইচ–২০কে গেম চেঞ্জার হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রকল্পটি অত্যন্ত গোপনীয়, তবে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে এর কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এইচ–২০ একটি ফ্লাইং উইং ডিজাইনের স্টেলথ বোমার, যা যুক্তরাষ্ট্রের নর্থরপ বি–২ স্পিরিট বা বি–২১ রেইডারের সমতুল্য হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এইচ–২০ সর্বোচ্চ প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যুদ্ধপরিসর বজায় রাখতে পারবে। অর্থাৎ চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে উড্ডয়ন করে গুয়াম, অস্ট্রেলিয়া এমনকি হাওয়াই পর্যন্ত হামলা চালানো সম্ভব হতে পারে এটি দিয়ে। বিমানটি পারমাণবিক ও প্রচলিত- দুই ধরনের অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদি এসব তথ্য সঠিক হয়, তাহলে এটিই হবে চীনের প্রথম কৌশলগত বোমার, যার মাধ্যমে দেশটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশ- এই তিন ক্ষেত্রেই পারমাণবিক হামলার সক্ষমতা অর্জন করবে। এটি চীনের সামরিক ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিরোধ কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
অন্যদিকে শেনইয়াং এয়ারক্রাফট করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে জেএইচ–এক্সএক্সের উন্নয়ন চলছে বলে ধারণা করা হয়। এটি দুই-ইঞ্জিনবিশিষ্ট মধ্যপাল্লার স্টেলথ বোমার, যা আঞ্চলিক পর্যায়ে দ্রুত ও নির্ভুল হামলার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। জেএইচ–এক্সএক্স-এর সম্ভাব্য পাল্লা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার এবং বহনক্ষমতা ১০ থেকে ২০ টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি এইচ–৬ ও এইচ–২০-এর মধ্যবর্তী একটি সংযোগকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেএইচ–এক্সএক্স দ্রুত ও নির্ভুল হামলা এবং পারমাণবিক ও প্রচলিত- উভয় ধরনের আঞ্চলিক প্রতিরোধ মিশনের জন্য উপযোগী হবে। প্রতিদ্বন্দ্বীর আকাশসীমায় প্রবেশ করে টিকে থাকার ক্ষমতা এটিকে ইন্দো–প্রশান্ত অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী ও তাদের ঘাঁটিগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে।
চীন যদি এই প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে দেশটির সামরিক ও কৌশলগত অবস্থান আমূল পরিবর্তিত হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যের ওপর সরাসরি চাপ তৈরি হবে এবং চীনের অ্যান্টি-অ্যাক্সেস বা এরিয়া ডিনায়েল সক্ষমতা আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পগুলোর ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে। দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ ও বিশাল নৌবহর সম্প্রসারণের পাশাপাশি আধুনিকায়িত এই বোমারুবিমান বাহিনী এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।