রোববার থেকে প্রথমবারের মতো সারা দেশে টাইফয়েড টিকা দেওয়া শুরু

আগামীকাল রোববার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। সরকার ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে বিনামূল্যে এই টিকা দেবে। যেসব শিশুর এখনো জন্ম নিবন্ধন করা হয়নি, তারাও এই টিকা পাবে। মাসব্যাপী এই ক্যাম্পেইন চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় 'টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫' কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবউদ্দিন খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আগামীকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দেশের ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। পরদিন সোমবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই টিকা দেওয়া হবে।
কারা টিকা পাবে?
৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশু এই টিকা পাবে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি (অথবা সমমান) পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ স্কুল বা মাদরাসায় এক ডোজ টাইফয়েড টিকা পাবে। যেসব শিশু স্কুলে ভর্তি হয়নি, তারা নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। এছাড়া শহরের পথশিশুদের টিকা প্রদানের দায়িত্বে থাকবে বিভিন্ন এনজিও।
চিকিৎসকরা অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন, শিশুদের যেন টিকা নেওয়ার আগে ভালোভাবে খাওয়ানো হয়।
কেন এই টিকা দেওয়া জরুরি?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'বাংলাদেশে দেওয়া টাইফয়েড টিকাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রি-কোয়ালিফায়েড, নিরাপদ ও পরীক্ষিত।'
তিনি জানান, টাইফয়েড শিশুদের উচ্চ মৃত্যুহারের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর প্রতিরোধ এখন অত্যন্ত জরুরি।
২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওই বছর বাংলাদেশে টাইফয়েডে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার, যাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের (প্রায় ৬,০০০ জন) বয়স ১৫ বছরের নিচে।
এই জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য হলো মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড সংক্রমণ ও মৃত্যু কমানো— যেগুলোর বিরুদ্ধে অনেক প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কার্যকর নয়।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান আরও জানান, টিকাটি তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। সরকার টিকা বিষয়ক আন্তর্জাাতিক মঞ্চ গ্যাভির কাছ থেকে এই টিকা পেয়েছে।
পাকিস্তান (২০১৯), নেপাল (২০২২) ও ভারতের মুম্বাইয়ে সফলভাবে এই টিকা ব্যবহৃত হয়েছে এবং কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
নিবন্ধনের নিয়ম
টিকা নেওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে (https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv) নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর দিতে হবে। নিবন্ধন শেষে একই নম্বর ব্যবহার করে টিকাকার্ড ডাউনলোড করা যাবে। গত ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেসব শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই, তারা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবে।