কলকাতার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে
গত বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের জেরে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যাওয়া মানুষের প্রবাহে বড় ধাক্কা লেগেছিল। তবে হাসপাতালগুলো বলছে, গত ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মেডিক্যাল ট্যুরিস্টের সংখ্যা আবারও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে অস্থিরতা ও ভিসাপ্রাপ্তিতে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, ২০২৪ সালে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পর্যটকদের প্রধান উৎস ছিল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে মোট বাংলাদেশি মেডিক্যাল ট্যুরিস্টের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৬ জন, যা ২০২৩ সালের ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫১ জনের প্রায় কাছাকাছি। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০৫ জন।
চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়া বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৫৬ জন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর মেডিক্যাল ট্যুরিজম ইকোসিস্টেম—যার মধ্যে রয়েছে সেবাদাতা, সহযোগী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হোটেল ও এয়ারলাইন্সের মতো বাণিজ্যিক সংস্থা—বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।
মেডিক্যাল ট্যুরিজম রেটিং সংস্থা কেয়ারএজ-এর তথ্যমতে, ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, গুণগত মান ও সাশ্রয়ী চিকিৎসার খোঁজে বিদেশি রোগীদের আগমন বাড়ার ফলে ভারতে মেডিকেল ভ্যালু ট্রাভেল (এমভিটি) খাতের আকার ২০২৬ সালের মধ্যে ১৩.৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে এই খাতের মূল্য ছিল ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার।
দক্ষিণ কলকাতার রুবি এলাকার ডিসান হাসপাতাল বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেখানে বাংলাদেশি রোগীদের যাতায়াত বাড়তে শুরু করেছে।
রুবি জেনারেল হাসপাতালে এক বছর আগেও প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ জন বাংলাদেশি রোগী যেত। রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই সংখ্যা কমে প্রায় ২০০-তে নেমে এসেছিল। বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৪০০ হয়েছে, যদিও তা আগের চেয়ে এখনো অনেক কম।
হাসপাতালটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) শুভাশিস দত্ত বলেন, 'গত দুই মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কিন্তু আমরা আগে যে পরিমাণ রোগী পেতাম, বর্তমান সংখ্যা এখনো তার অর্ধেক।'
মণিপাল গ্রুপের হাসপাতালগুলোতেও রোগীর সংখ্যা কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মণিপাল হসপিটালস-এর (পূর্ব) আঞ্চলিক চিফ অপারেটিং অফিসার অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মেতিক্যাল ট্যুরিস্টরা যে বিলম্বে পড়ছিলেন, তা 'ধীরে ধীরে কমে আসছে। ফলে আরও বেশি রোগী কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা নিতে পারছেন'।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। দেবগুপ্ত বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশ থেকে রোগীর সংখ্যা মাসে প্রায় ১ হাজার ৭০০-তে নেমে এসেছিল। তবে এখন তা বেড়ে গড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০-তে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই নতুন রোগী।'
তিনি আরও জানান, তাদের গ্রুপ পূর্ব ভারতে অবস্থিত মণিপাল হাসপাতালের শাখাগুলোর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩০০ মেডিক্যাল ভিসা রিকমেন্ডেশন ইস্যু করছে।
ওপিডি-তে বাংলাদেশি রোগীর উপস্থিতি কম
বাংলাদেশি রোগীদের কাছে জনপ্রিয় দক্ষিণ কলকাতার আরেকটি চিকিৎসাকেন্দ্র পিয়ারলেস হাসপাতাল। বর্তমানে তাদের বহির্বিভাগে (ওপিডি) প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন বাংলাদেশি রোগী যাচ্ছেন। এক বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫০ জন। এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তির ঘটনা খুবই বিরল।
হাসপাতালের একজন মুখপাত্র বলেন, ভিসা প্রক্রিয়াকরণে ধীরগতির কারণে সম্ভবত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রোগীর সংখ্যা কম রয়েছে।
কিছু বেসরকারি হাসপাতাল বলছে, বহির্বিভাগে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো টেলিমেডিসিন বা অনলাইন চিকিৎসা সেবার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, বিশেষ করে ফলো-আপ চিকিৎসার ক্ষেত্রে।
বিপি পোদ্দার হাসপাতালের গ্রুপ উপদেষ্টা সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, 'নন-ইমার্জেন্সি যেসব হৃদরোগী ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন কিংবা আগে থেকেই আইভিএফ চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা এখন অনলাইনে পরামর্শ নিচ্ছেন।'
পিয়ারলেস হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ কারণেই সম্ভবত তারা অনলাইন পরামর্শ সেবা চালু করেননি এবং সশরীরে রোগী আসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস-এর চিত্রও অনেকটা একই। হাসপাতালটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নারায়ণা হেলথ-এর গ্রুপ চিফ অপারেটিং অফিসার আর ভেঙ্কটেশ জানান, ২০২৪ সালের জুনে সেখানে বাংলাদেশি রোগীদের মাসিক উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬ হাজার—যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে কমে মাত্র ১ হাজার ৮০০-তে দাঁড়িয়েছে।
