বহিরাগত হুমকি ছাড়া দেশের ভেতর সেনা মোতায়েন চায় না বেশিরভাগ আমেরিকান : জরিপ

রয়টার্স/ইপসোস-এর এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে প্রেসিডেন্টের সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন উচিত শুধুমাত্র বাইরের কোনো হুমকির মোকাবিলা করার জন্য। এই মতামতের মধ্যে ১০ জনের ৭ জন ডেমোক্র্যাট এবং অর্ধেকের মতো রিপাবলিকানও রয়েছেন। এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার শহরগুলোতে পুলিশি দায়িত্ব পালনের জন্য ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েন বাড়িয়েই চলেছেন।
শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চালানো এই জরিপে আরও দেখা গেছে যে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের হার কিছুটা কমে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকের জরিপের চেয়ে ১ শতাংশ কম। বিশেষ করে অপরাধ দমন এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ সামলানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকার ওপর মানুষের আস্থা কমেছে।
এই জরিপটি এমন এক সময়ে করা হয়েছে, যখন ট্রাম্প ভার্জিনিয়ায় সারা বিশ্ব থেকে ডেকে আনা শত শত জেনারেল এবং অ্যাডমিরালের এক নজিরবিহীন বৈঠকে বলেছেন যে আমেরিকাকে এখন 'দেশের ভেতরের শত্রুর' মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একই সময়ে তিনি ওয়াশিংটন ডি.সি. এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোতে সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করেছেন।
ডেমোক্র্যাট নেতারা বলছেন, এই সেনা মোতায়েন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সোমবার ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, স্থানীয় ও রাজ্য কর্মকর্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও শহরে সেনা মোতায়েনের আদেশে যদি কোনো আদালত বাধা দেয়, তবে তিনি সেই রায় এড়ানোর জন্য ১৮ শতকের একটি বিদ্রোহ-দমন আইন ব্যবহার করবেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ মনে করেন যে, রাজ্যের গভর্নররা আপত্তি জানালেও প্রেসিডেন্টের সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা থাকা উচিত। অন্যদিকে, ৪৮ শতাংশ এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
ট্রাম্প এর আগেও আমেরিকার সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেন এই যুক্তিতে যে, অপরাধী অভিবাসীরা দেশে আক্রমণ চালাচ্ছে। এমনকি তিনি ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে নৌকায় থাকা সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারীদের কোনো বিচার ছাড়াই হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন।
গত সপ্তাহে শীর্ষ সামরিক নেতাদের সাথে বৈঠকের আগে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, যাদেরকে তার পছন্দ নয়, তাদের তিনি বরখাস্ত করবেন। ডেমোক্র্যাটরা এর সমালোচনা করে বলেছেন, রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনীকে নিজের পক্ষে টানার জন্যই ট্রাম্প এই চাপ সৃষ্টি করছেন।
সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা চান আমেরিকানরা
আমেরিকার সেনাবাহিনী ঐতিহ্যগতভাবে নিজেদের রাজনৈতিক আলোচনা থেকে অনেক দূরে রাখে, এবং রয়টার্স/ইপসোস-এর জরিপেও দেখা গেছে যে আমেরিকানরা এই নীতিই পছন্দ করে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ বলেছেন, সেনাবাহিনীর 'রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকা উচিত এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির বিতর্কে কোনো পক্ষ নেওয়া উচিত নয়।' অন্যদিকে, মাত্র ১০ শতাংশ মনে করেন যে সশস্ত্র বাহিনীর উচিত পক্ষ নেওয়া শুরু করা এবং প্রেসিডেন্টের অভ্যন্তরীণ নীতির এজেন্ডাকে সমর্থন করা। তবে প্রতি পাঁচজন রিপাবলিকানের মধ্যে প্রায় একজন বলেছেন যে, রাজনৈতিক বিতর্কে সেনাবাহিনীর প্রেসিডেন্টের পক্ষ নেওয়া উচিত।
সর্বশেষ এই জরিপে, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের হার ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ৫-৯ সেপ্টেম্বরের জরিপে ৪৩ শতাংশ ছিল।
২০ জানুয়ারি অভিষেকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রয়টার্স/ইপসোস-এর জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ৪৭% সমর্থন দেখা গিয়েছিল। সেই তুলনায় তার সামগ্রিক জনপ্রিয়তা ৭ শতাংশ কমেছে।
অনলাইনে পরিচালিত এই রয়টার্স/ইপসোস জরিপে সারা দেশ থেকে ১,১৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান অংশ নিয়েছেন এবং এতে ভুলের সম্ভাবনা ৩ শতাংশ।