ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো কী কী?

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যস্থতাকারীরা মিশরের শার্ম এল-শেখে পৌঁছেছেন। সেখানে তারা ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধে শেষ করার বিষয়ে পাক্ষিক আলোচনা শুরু করবেন। খবর বিবিসি'র।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই বছর পর এটি দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তির দিকে অগ্রগতির সবচেয়ে নিকটবর্তী মুহূর্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গে ইসরায়েল সম্মত হয়েছে এবং হামাস আংশিকভাবে সম্মতি দিয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি কেবল মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার একটি খসড়া কাঠামো।
এখনও দুই পক্ষের সমঝোতায় আসার মত আরও বড় বিষয় রয়ে গেছে।
বন্দী মুক্তির কাঠামো
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোনো চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাকি সকল বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখনও ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
ট্রাম্প সপ্তাহের শেষে বলেছেন, বন্দীদের 'খুব শিগগিরই' মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তারা ইহুদীদের উৎসব সুক্কট শেষ হওয়ার আগেই বা অক্টোবরের ১৩ তারিখের মধ্যে মুক্তি পেতে পারেন।
হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বর্ণিত বন্দী 'বিনিময় ফরমুলা' নিয়ে সম্মতি দেখিয়েছে। তবে তাদের শর্ত হলো, নির্দিষ্ট 'ফিল্ড কন্ডিশন' বা মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি পূরণ হতে হবে।
তবে বন্দীরা হামাসের একমাত্র আলোচনার হাতিয়ার এবং অন্য চুক্তির বিষয়গুলো চূড়ান্ত হওয়ার আগে তারা মুক্তি দিতে রাজি হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস প্রায় নেই বললেই চলে। গত মাসে ইসরায়েল দোহায় হামাসের আলোচক দলের ওপর বিমান হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। এটি হামাসের পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মধ্যস্থতাকারী কাতারের রোষের কারণ হয়েছে।
উক্ত আলোচনাকারী দলের সদস্যরা— যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল-হাইয়া, তার ছেলে সেই হামলায় নিহত হয়েছিল। সেই খলিলই এবার মিশরে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মাত্র কয়েক কদম দূরত্বে বসে বৈঠক করবেন।
হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ
যুদ্ধ চলাকালীন ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য ছিল হামাসকে ধ্বংস করা। নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, হামাস নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি থামবেন না।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো হামাসকে অস্ত্র পরিত্যাগ করতে হবে। তবে হামাস আগে জানিয়েছে, তারা শুধু তখনই অস্ত্র পরিত্যাগ করবে যখন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
হামাসের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় অস্ত্র পরিত্যাগের কোনো উল্লেখ নেই। এট ইঙ্গিত দেয়, তাদের অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের শেষে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, 'হামাসকে অস্ত্রশূন্য করা হবে এবং গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে— হোক তা সহজভাবে, কিংবা কঠিনভাবে।'
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস গাজার ভবিষ্যতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। গাজা অস্থায়ী একটি মধ্যবর্তী প্রশাসনের মাধ্যমে শাসিত হবে, যা ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং 'বোর্ড অফ পিস'-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এবং এতে যুক্ত থাকবেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
শেষপর্যায়ে গাজার শাসন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে (পিএ) হস্তান্তর করা হবে।
যদিও নেতানিয়াহু ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার সব শর্ত মেনে নিয়েছেন, গত সপ্তাহে তিনি পডিয়ামে প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়িয়ে পিএর অন্তর্ভুক্তিতে বিরোধ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, তারা গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
পরিকল্পনার এই দফা নেতানিয়াহুর শাসক জোটের চরম জাতীয়তাবাদী সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। এদের মধ্যে অনেকেই গাজা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এবং সেখানে ইহুদি বসতি পুনর্গঠন করতে চাচ্ছেন।
হামাসের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, তারা গাজার ভবিষ্যতে 'একক ফিলিস্তিনি আন্দোলনের' অংশ হিসেবে কিছু ভূমিকা আশা করছে। যদিও তাদের ভাষ্য অস্পষ্ট, এটি ট্রাম্প ও ইসরায়েলের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা থেকে কতটা সরে যাবে, তা পরিকল্পনার একটি বড় বিতর্কিত বিষয়।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সেনারদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হবে 'নির্দিষ্ট মান, ধাপ এবং সময়সীমা অনুযায়ী', যা সব পক্ষকে মেনে নিতে হবে।
হোয়াইট হাউস যে মানচিত্রটি প্রকাশ করেছে, তাতে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের তিনটি ধাপ দেখানো হয়েছে। প্রথম ধাপে গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থাকে, দ্বিতীয় ধাপে ৪০ শতাংশ এবং শেষ ধাপে ১৫ শতাংশ।
শেষ ধাপটি একটি 'সিকিউরিটি প্যারামিটার' বা নিরাপত্তা বলয় হিসেবে থাকবে, যা 'গাজা পুরোপুরি কোনো নতুন সন্ত্রাসী হুমকি থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত' বজায় থাকবে।
এখানে সময়সীমা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যা হামাসের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া, হোয়াইট হাউসের মানচিত্র ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নিজেদের মানচিত্রের সঙ্গে মিলে না এবং কিছু স্থানে গাজার সীমানা ভুলভাবে দেখানো হয়েছে।