আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ ছিলাম: আদালতে দীপু মনি

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, আমি অসুস্থ। কারাগারে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কিছুদিন আগে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে মারা গেছেন। এখন আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ ছিলাম।
জুলাই আন্দোলন কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগ থানার ঝুট ব্যবসায়ী মনির হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালত। রিমান্ড শুনানি চলাকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে কারাগার থেকে দীপু মনি ও সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর শাহবাগ থানার জুট ব্যবসায়ী মো. মনির হত্যা মামলায় দীপু মনির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মাইনুল খান পুলক। একই সঙ্গে লালবাগ থানার হত্যা মামলায় সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০ টায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে তাদেরকে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। প্রথমে দীপু মনির রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি চলাকালে দীপু মনির আইনজীবী গাজী ফয়সাল ইসলাম বলেন, আসামি দীর্ঘদিন ধরে হাজতে রয়েছে। তিনি নারী হওয়ায় বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন। এই মামলায় এজাহারে তার নাম ছাড়া কিছুই নেই। এ বিষয়ে আসামি কিছু বলতে চান।
পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে দীপু মনি বলেন, আমি অসুস্থ। কারাগারে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। গত মাসের ৯/১০ তারিখে আমি অসুস্থ হওয়ায় শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনুমতি নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, গতকাল হাসপাতাল নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ স্কোয়াড না থাকায় নেওয়া হয়নি। ভাবছিলাম আজকে হাসপাতালে নেওয়া হবে। কিন্তু দেখলাম আমাকে আদালতে আনা হয়েছে। পুলিশ স্কোয়াডের কারণে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না, অথচ আদালতে আনা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আমার যে চিকিৎসা দরকার সেটা পাচ্ছিনা।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৬০ টির অধিক মামলা। কিন্তু আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিনা। গত এক বছরে তিনবার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাকে আদালতে নেওয়া হয় সেদিনই যেন হাজত খানায় আমার সঙ্গে আইনজীবীর কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাহলে মামলা সম্পর্কে একটু আলোচনা করতে পারি।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, কারা বিধি অনুযায়ী সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে। তারা জেলগেটে চাইলে সাক্ষাৎ করতে পারবে। তিনি মূলত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
তখন দীপু মনি আবারও বলেন, মাননীয় আদালত সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে মারা গেছেন। এখন আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ ছিলাম। তখন উপস্থিত আইনজীবীরা তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন।
এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম বলেন, এখানে লিগাল আর্গুমেন্ট হচ্ছে। সবাই কি রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী? তখন পাশে থাকা কয়েকজন আইনজীবী তাকে বলেন, গায়ে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে। প্রত্যুত্তরে সোলায়মান সেলিম বলেন, তাই বলে কি আমরা চিকিৎসা পাবো না।
শুনানি শেষে এই মামলায় দীপু মনির চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে লালবাগ থানার শাওন সিকদার হত্যা মামলায় সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর সকাল ১১ টার দিকে আবারও পুলিশ প্রহরায় তাদের আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।