চীনা বিজ্ঞানীদের রিচার্জেবল বহুরঙা সাকুলেন্ট উদ্ভিদ আবিষ্কার, আলো ছড়াবে অন্ধকারে

বিজ্ঞান কল্পকাহিনিতে বা ফ্যান্টাসি জগতে আমরা হয়তো রাতে অন্ধকারে রাস্তা আলোকিত করা উজ্জ্বল গাছের কথা শুনেছি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এমন গাছ তৈরি করেছেন যা সবুজ আভা নির্গত করে। এমনকি, সেগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিকভাবেও পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি একদল চীনা গবেষক আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। তারা প্রথম বহুরঙা এবং সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো ছড়ানো উদ্ভিদ তৈরি করেছেন বলে দাবি করেছেন।
সাউথ চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী শুটিং লিউ বলেন, 'অ্যাভাটার' চলচ্চিত্রের কথা ভাবুন, যেখানে উজ্জ্বল উদ্ভিদ একটি পুরো ইকোসিস্টেমকে আলোকিত করে তোলে। আমরা পরীক্ষাগারে ইতিমধ্যে ব্যবহৃত উপকরণগুলো দিয়েই সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছিলাম। কল্পনা করুন, রাস্তার সোডিয়ামের আলোর বদলে থাকবে আলো ছড়ানো গাছ!'
গাছগুলোকে আলোকিত করতে লিউ এবং তার সহকর্মীরা 'ইচেভেরিয়া মেবিনা' নামক সাকুলেন্ট উদ্ভিদের পাতায় স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট ইনজেক্ট করেছেন। এই উপাদানটি প্রায়শই অন্ধকারে জ্বলে ওঠা খেলনাতে ব্যবহৃত হয়, যা আলো শোষণ করে এবং ধীরে ধীরে তা নির্গত করে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একটি দলের উদ্ভাবিত মডেল অনুসরণ করে বিজ্ঞানীরা সাধারণত এই প্রভাব অর্জনের জন্য ঐতিহ্যবাহী জিন-এডিটিং কৌশল ব্যবহার করেন। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিটি সেই প্রচলিত কৌশল থেকে ভিন্ন।

গবেষকরা জিন সম্পাদনা করার পরিবর্তে উদ্ভিদের মধ্যে ন্যানোপার্টিকেল প্রবেশ করিয়ে লাল, নীল এবং সবুজ আলো ছড়ানো গাছ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সাধারণত, উদ্ভিদের প্রাকৃতিক রঙের সীমাবদ্ধতার কারণে বিজ্ঞানীরা কেবল সবুজ আভা তৈরি করতে পারেন।
লিউ বলেন, 'জিন এডিটিং একটি চমৎকার পদ্ধতি। তবে আমরা বিশেষভাবে অজৈব আফটারগ্লো উপকরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি যা আলো দ্বারা 'চার্জ' হয়ে ধীরে ধীরে আলো নির্গত করতে পারে।'
গবেষণা দলটি তাদের এই ধারণার বাস্তব ব্যবহার দেখানোর জন্য ৫৬টি উদ্ভিদ দিয়ে একটি সবুজ দেয়াল তৈরি করেছে। গবেষণা অনুযায়ী, এই দেয়াল থেকে এত পরিমাণ আলো উৎপন্ন হয় যে, ১০ সেন্টিমিটার (চার ইঞ্চি) দূর থেকে লেখা, ছবি এবং একজন মানুষকেও দেখা যায়।
একবার ইনজেকশন দেওয়ার পর কয়েক মিনিটের জন্য সরাসরি সূর্যালোকের নিচে রাখলে, গাছগুলো দুই ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলতে থাকে।
লিউ জানান, যদিও এই সময়ের মধ্যে আলোর উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তবে 'গাছগুলোকে সূর্যালোকের সংস্পর্শে বারবার রিচার্জ করা যেতে পারে,' যা উদ্ভিদের সঞ্চিত শক্তিকে পুনরায় পূরণ করে এবং 'সূর্যালোক অপসারণের পরেও গাছগুলোর আলো জ্বলতে সাহায্য করে।'

লিউ আরও বলেন, চিকিত্সার ২৫ দিন পরেও গাছগুলো আলো ছড়ানোর ক্ষমতা ধরে রাখে। এমনকি, 'আফটারগ্লো' কণা দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া পুরোনো পাতাগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পরেও অতিবেগুনি রশ্মির উদ্দীপনায় আলো নির্গত করতে থাকে।
যদিও লিউ স্বীকার করেন যে, স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট উদ্ভিদের টিস্যুর ক্ষতি করে সহজেই পচে যেতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা এই উপাদানটির জন্য একটি রাসায়নিক আবরণ তৈরি করেছেন যা প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে কাজ করে।
তবে, অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং প্রাণরসায়নবিদ জন কার বলেন, 'আমি এই গবেষণাপত্রটি পছন্দ করেছি কিন্তু আমার মনে হয় এটি বর্তমান প্রযুক্তির থেকে কিছুটা এগিয়ে এবং উদ্ভিদ যা সহ্য করতে পারে তার বাইরেও হতে পারে।'
লিউও এটি মানেন যে, উদ্ভিদগুলো 'এখনও কার্যকরী আলো প্রদানের জন্য অনেক দূরে, কারণ ব্যবহারিক আলোর প্রয়োগের জন্য এদের ঔজ্জ্বল্য এখনও খুব দুর্বল। এছাড়াও, উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের জন্য আফটারগ্লো কণার নিরাপত্তা মূল্যায়ন এখনও চলছে।'
তিনি বলেন, বর্তমানে আলো ছড়ানো উদ্ভিদগুলো 'প্রাথমিকভাবে আলংকারিক প্রদর্শনী বা শোভাময় রাতের আলো হিসেবে কাজ করতে পারে।'
তবে, 'সামনের দিকে তাকিয়ে, যদি আমরা আলোর উজ্জ্বলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে এবং এর স্থায়িত্বকাল দীর্ঘায়িত করতে পারি – এবং একবার নিরাপত্তা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় – তাহলে আমরা এমন বাগান বা পাবলিক স্থানের কল্পনা করতে পারি যা রাতে আলো ছড়ানো উদ্ভিদ দ্বারা মৃদুভাবে আলোকিত হবে,' বলেন লিউ।