পূর্বাঞ্চলের শিল্প এলাকা নিপ্রোপেত্রোভস্ক দখলের দ্বারপ্রান্তে রাশিয়া, স্বীকার করল ইউক্রেন

ইউক্রেন জানিয়েছে, রুশ সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র নিপ্রোপেত্রোভস্কে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কিয়েভ দাবি করেছে, তাদের অগ্রযাত্রা দ্রুতই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিপ্রো অপারেশনাল-স্ট্র্যাটেজিক গ্রুপের কর্মকর্তা ভিক্টর ত্রেহুবভ বিবিসিকে বলেন, 'নিপ্রোপেত্রোভস্কে এর আগে কখনো এত বড় আকারের হামলা হয়নি।' তিনি আরও জানান, রুশ সেনারা সীমান্ত ভেদ করলেও তাদের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বলছে, তারা এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। জুনের শুরুতে মস্কো জানায়, নিপ্রোপেত্রোভস্কে তাদের আক্রমণ শুরু হয়েছে। তবে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, রুশ সেনারা সীমান্ত অতিক্রম ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য পায়নি।
যদি রাশিয়া নিপ্রোপেত্রোভস্কে স্থায়ীভাবে অবস্থান নিতে পারে, তবে তা ইউক্রেনের জন্য বড় ধাক্কা হবে। এই সময়ে শান্তি আলোচনা কার্যত থমকে গেছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি আলাস্কায় বৈঠক করেছেন।
ইউক্রেনের ডিপস্টেট মানচিত্র প্রকল্প জানিয়েছে, রুশ বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে জাপোরিজকে ও নোভোহ্রিহরিভকা গ্রাম দখল করেছে। তবে কিয়েভ বলছে, জাপোরিজকে এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নোভোহ্রিহরিভকায়ও লড়াই চলছে।
রাশিয়া নিপ্রোপেত্রোভস্ককে নিজেদের দাবি না করলেও এর রাজধানী নিপ্রো বড় শহরগুলোতে আক্রমণ চালিয়েছে। যুদ্ধের আগে এ অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখের বেশি এবং এটি দনবাসের পর ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল।
রুশ বাহিনী ধীরগতিতে অগ্রসর হলেও প্রচুর হতাহতের শিকার হয়েছে। তবু তারা দোনেৎস্কে কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। চলতি মাসে দোব্রোপিলিয়ার কাছে হঠাৎ ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়লেও পরে তাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়।
কিয়েভের ধারণা, মস্কো নিপ্রো নদীর পূর্ব দিকের পুরো ইউক্রেন দখল করতে চায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক করেছে, ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে শান্তি চুক্তি করা আসলে রাশিয়ার কৌশল।
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে শীর্ষ বৈঠক আয়োজন নিয়ে এখনো অগ্রগতি হয়নি। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, আলোচনার জন্য কোনো এজেন্ডা প্রস্তুত নেই।
এদিকে ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে যুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জোরদার করেছে। জেলেনস্কি কিয়েভে ব্রিটিশ সেনাপ্রধান স্যার টনি রাডাকিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। লন্ডন জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জও বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ইউক্রেনীয় সেনাদের দীর্ঘমেয়াদি আত্মরক্ষার সক্ষমতা দেবে।
অন্যদিকে ইউক্রেন সরকার ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী পুরুষদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। যারা ইতোমধ্যে বিদেশে আছেন, তারাও দেশে ফিরে আবার বাইরে যেতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো বলেন, 'আমরা চাই তরুণরা যতটা সম্ভব ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুক।'
সরকারি হিসাবে বর্তমানে প্রায় ৫৬ লাখ ইউক্রেনীয় পুরুষ দেশের বাইরে বসবাস করছেন।