ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা, মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

ইউক্রেনে রাশিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববারের এ হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। এতে প্রথমবারের মতো কিয়েভে ইউক্রেনের প্রধান সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর বিবিসি'র।
ইউক্রেন জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৮১০টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আরও শক্ত অবস্থান নেওয়ার দাবি জোরদার হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার বলেন, 'কোনো নিষেধাজ্ঞাই রাশিয়াকে তার সেই অটল অবস্থান থেকে সরাতে পারবে না, যার কথা আমাদের প্রেসিডেন্ট বহুবার স্পষ্ট করে বলেছেন।'
রুশ হামলার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি 'পুরো পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন'।
ট্রাম্প এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন সময়সীমা ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
রোববার সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে 'শাস্তির দ্বিতীয় ধাপে' যেতে প্রস্তুত? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত।' তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াতে প্রস্তুত আছে। তবে এজন্য ইউরোপের দেশগুলোর শক্ত সমর্থন দরকার।
এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ায় এবং রুশ তেল কিনে এমন দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তবে 'রুশ অর্থনীতি পুরোপুরি ধসে পড়বে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য হবেন'।
তিনি আরও বলেন, 'এখন প্রতিযোগিতা চলছে—কত দিন পর্যন্ত ইউক্রেনের সেনারা টিকে থাকতে পারে, আর কত দিন পর্যন্ত রুশ অর্থনীতি টিকে থাকতে পারে।'
যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দিল্লি রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ওয়াশিংটনের এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ ধরনের শুল্ক বা দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা অন্য দেশেও বাড়ানো হতে পারে। তবে এখনো তা কার্যকর হয়নি।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার কিছু ইউরোপীয় নেতা ওয়াশিংটনে আসবেন। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, 'কিছু ইউরোপীয় নেতা সোমবার বা মঙ্গলবার পৃথকভাবে আমাদের দেশে আসছেন।' তবে কারা আসছেন, তা তিনি জানাননি। ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, তিনি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলবেন।
অন্যদিকে, এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপীয় দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা পুরোপুরি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমাদের যেকোনো ধরনের রুশ জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে। শুধু জ্বালানি নয়, রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তিই চলতে পারে না। তাদের থামাতে চাইলে সব লেনদেন বন্ধ করতে হবে।' ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কৌশলকে তিনি 'সঠিক সিদ্ধান্ত' বলে প্রশংসা করেন এবং মনে করেন, এতে মস্কোর আয় কমবে।
থিংকট্যাঙ্ক 'সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার'-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তেল ও গ্যাস বিক্রি করে রাশিয়া প্রায় ৯৮৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
এই আয়ের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন ও ভারত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ক্রয় অনেকটা কমালেও পুরোপুরি বন্ধ করেনি। ব্রাসেলস ঘোষণা করেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে তারা রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করবে।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞার মাঝেও রাশিয়া নতুন বাজার খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে বৈঠকে মস্কো জানিয়েছে, তারা চীনে গ্যাস সরবরাহ আরও বাড়াবে।
একই সময়ে, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস, যেখানে রাশিয়াও সদস্য, উৎপাদন বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এতে বৈশ্বিক তেলের দাম কমতে পারে, যা মস্কোর অর্থনীতিকে চাপে ফেলার পশ্চিমা কৌশলকে জটিল করে তুলবে।