ট্রাম্পের নতুন শুল্ক থেকে আদায় ছাড়াল ২০০ বিলিয়ন ডলার: মার্কিন কাস্টমস
২০২৫ সালের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপ করার ফলে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব আদায় করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) এজেন্সি।
সোমবার (যুক্তরাষ্ট্র সময়) সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে। এই হিসাব এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন শুল্কগুলো অবৈধ কি না—সে বিষয়ে উত্থাপিত যুক্তিতর্ক বিবেচনা করছে।
২০০ বিলিয়ন ডলারের এই পরিমাণটি শুধুমাত্র ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরোপিত নতুন শুল্ক থেকে আদায়ের হিসাব। হোয়াইট হাউসে তার প্রথম মেয়াদে আরোপিত শুল্কগুলো এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নয়। সেসব পুরোনো শুল্ক বর্তমানে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়লেও নতুন শুল্কগুলো সে ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই একতরফাভাবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পণ্যের ওপর যাকে তিনি 'পারস্পরিক শুল্ক' বলে অভিহিত করেছেন, তা আরোপ করেন।
এ ছাড়া কানাডা, চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর তিনি তথাকথিত 'ফেন্টানিল শুল্ক' আরোপ করেন। আলোচিত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে এই মারাত্মক মাদক পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবেই এসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প।
সিবিপি এক বিবৃতিতে জানায়, "২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জারি করা ৪০টিরও বেশি নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আদায় করেছে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "এই পরিসংখ্যান নিরাপদ, ন্যায্য ও বিধিবদ্ধ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে সিবিপির কার্যকারিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদারে তাদের ভূমিকার প্রতিফলন।"
তবে নভেম্বর মাসে শুল্ক আদায় কমে আসে, যা ছিল এপ্রিল মাসে ব্যাপক নতুন শুল্ক ঘোষণার পর প্রথমবারের মতো পতন। গত মাসে মার্কিন সরকার ৩০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করে, যা অক্টোবরে আদায়কৃত ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় সামান্য কম।
এই হ্রাসের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পরিবহন কমে যাওয়া এবং কিছু শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও সিবিপির কমিশনার রডনি স্কট এক বিবৃতিতে বলেন, "সিবিপির কঠোর প্রয়োগ কার্যকর ফল দিচ্ছে।"
তিনি বলেন, "গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ, কঠোর নজরদারি ও দ্রুত পদক্ষেপের সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সুরক্ষিত করছি, দেশীয় শিল্প রক্ষা করছি এবং যারা আমাদের বাণিজ্য আইন ভাঙতে চায়—তাদের জবাবদিহির আওতায় আনছি।"
যদি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ট্রাম্পের নতুন শুল্কগুলো বেআইনি, সে ক্ষেত্রে আদালত এ-ও বলতে পারে যে এখন পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করা প্রতিষ্ঠানগুলো তা ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখে।
এর আগে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালতের বিচারপতিদের বেঞ্চ ৭–৪ ভোটে একটি রায় বহাল রাখে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের একটি সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ওই রায়ে বলেছিল, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের (কংগ্রেস) সম্মতি ছাড়া এসব শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ট্রাম্পের ছিল না। অর্থাৎ, তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন না নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত তাদের রায়ে বলেন, "শুল্কের মতো কর আরোপের মূল ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী একচ্ছত্রভাবে আইনপ্রণয়নকারী শাখার হাতে ন্যস্ত। শুল্ক আরোপ কংগ্রেসের একটি মৌলিক ক্ষমতা।"
নভেম্বরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরাপণ্য বিক্রেতা জায়ান্ট কস্টকো অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্র হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তারা চলতি বছরে পরিশোধ করা শুল্কের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত চেয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছে।
