দমবন্ধ করে পানির নিচে ২৯ মিনিট, ক্রোয়েশিয়ান ফ্রিডাইভারের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড!

পানির নিচে প্রায় আধঘণ্টার মতো নিঃশ্বাস আটকে রেখে অবিশ্বাস্য এক কীর্তি গড়লেন ক্রোয়েশিয়ান ফ্রিডাইভার ভিটোমির মারিচিচ।
চলতি বছরের ১৪ জুন মেক্সিকোর তুলুমে অনুষ্ঠিত বিশেষ ডাইভিং ইভেন্টে এক নিঃশ্বাসে পানির নিচে ডুবে প্রায় ২৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড অবস্থান করে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়লেন তিনি।
আগের রেকর্ডটি অন্য এক ডাইভারের দখলে ছিল, যা মারিচিচ প্রায় পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে ভেঙে দিলেন।
গড়পড়তা মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে পারে। এমনকি ডলফিনও এত দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকতে পারে না।
পানিতে নামার আগে মারিচিচ প্রায় ১০ মিনিট বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করেন। এতে তার শরীরের রক্তে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি অক্সিজেন জমা হয়।এই প্রক্রিয়াই তাকে দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকার শক্তি জোগায়।
সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের ফুসফুস প্রায় ৪৫০ মিলিলিটার ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেন ধারণ করে, কারণ আমরা যে বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে নিই তার মাত্র ২১ শতাংশই অক্সিজেন।
যদি বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করা হয় তবে প্রতি নিঃশ্বাসে ফুসফুস প্রায় তিন লিটার অক্সিজেন শোষণ করতে পারে। এতে রক্ত থেকে নাইট্রোজেন ধুয়ে যায় এবং শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
এই প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র লাল রক্তকণিকায় অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে না, বরং রক্তের প্লাজমাতেও অক্সিজেন দ্রবীভূত হয়, যা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব নয়।
চিকিৎসাক্ষেত্রে অচেতন রোগীর 'নিরাপদ অ্যাপনিয়া সময়' বাড়ানোর জন্য ডাক্তাররা এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন—অর্থাৎ, কত সময় পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিরাপদে নিঃশ্বাস ছাড়াই থাকতে পারে তা বাড়ানো যায়।
এখানে মারিচিচ একই নীতি অনুসরণ করে নিঃশ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়েছেন।
তবে কেবল রেকর্ড গড়াই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল না। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মারিচিচ এই উদ্যোগ নেন সমুদ্র সংরক্ষণ ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
উল্লেখ্য, অক্সিজেন ছাড়া দীর্ঘতম শ্বাস বন্ধ রাখার রেকর্ড এখনও সার্বিয়ার ব্রাঙ্কো পেট্রোভিচের দখলে। ২০১৪ সালে তিনি ১১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখেন।