যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে বাংলাদেশি অভিবাসী পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৪ জন নিহত

নিউইয়র্ক সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার মিডটাউন ম্যানহাটনের একটি সুউচ্চ ভবনে এক বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালান। ভবনটিতে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল)-এর প্রধান কার্যালয় এবং ব্ল্যাকস্টোনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। ওই হামলায় চারজন নিহত হন।
বন্দুকধারীর নাম শনাক্ত করা হয়েছে শেন তামুরা হিসেবে। গুলি চালানোর পর তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেন।
নিহতদের মধ্যে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ৩৬ বছর বয়সী এক কর্মকর্তা রয়েছেন, যিনি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাকি তিনজন ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম দিদারুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশি অভিবাসী। এনওয়াইপিডির পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, তার দুটি সন্তান রয়েছে।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও দুই শিশু পুত্রের জনক ছিলেন। দিদারুল ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'তিনি (দিদারুল) নিজের কাজ করছিলেন—যা তিনি সব সময় করে থাকেন, আর যা আমাদের পুলিশ সদস্যরা প্রতিদিনই করেন। তিনি মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছিলেন, নিউইয়র্কবাসীকে রক্ষা করছিলেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন, ছিলেন একজন অভিবাসী। এই শহরকে খুব ভালোবাসতেন।'
মেয়র আরও বলেন, 'যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, সবাই বলেছেন—তিনি ছিলেন বিশ্বাসী একজন মানুষ, ধর্মভীরু, সৎ জীবনযাপন করতেন। তিনি এই শহরের চেতনার প্রতীক। শুধু ইউনিফর্মে নয়, মনের ভেতর থেকেও তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের নিউইয়র্কার।'
পুলিশ কমিশনার জেসিকা এস. টিশ বলেন, 'তিনি চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন।' তিনি জানান, দিদারুল নিজের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে অন্যদের রক্ষা করছিলেন। ঠাণ্ডা মাথায় তাকে গুলি করা হয়।
কমিশনার টিশ আরও বলেন, 'তিনি এমন একটি পোশাক পরে ছিলেন, যা এই শহরের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।' তিনি আরও বলেন, 'যেভাবে বেঁচে ছিলেন, সেভাবেই তিনি মারা গেছেন—একজন বীর হিসেবে।'
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিদারুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন অনেকে। কুইন্স শোমরিম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক বার্তায় বলে, '৪৭তম প্রিসিন্কটের অফিসার দিদারুল ইসলামের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। কর্তব্য পালনকালে আমাদের নিরাপদ রাখতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই কঠিন সময়ে আমরা এনওয়াইপিডি ও পুরো সম্প্রদায়ের পাশে আছি।'
জানা গেছে, দিদারুল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। সোমবার তিনি কর্তব্যে ছিলেন না, তবে রুডিন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তখনও তিনি ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় ছিলেন।
গুলি চালনার ঘটনার পর অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দিদারুল ছিলেন পরিশ্রমী, ইউনিফর্ম ও পুলিশ ব্যাজ পরতে গর্ববোধ করতেন। প্রতিদিন নিজের পরিবারের জন্য কাজ করতে বের হতেন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময়ও কাজ করতেন।
এদিকে নিউ ইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেসিকা টিশ জানিয়েছেন, বন্দুকধারী ব্যক্তি লাস ভেগাসের বাসিন্দা ছিলেন এবং সম্প্রতি সড়কপথে নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন। হামলার শেষ পর্যায়ে তিনি নিজের বুকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।
কমিশনার টিশ আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি একাই হামলাটি চালিয়েছেন। তবে এর পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ একটি ছবি গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে, যেখানে দেখা যায় বন্দুকধারী একটি রাইফেল হাতে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করছেন। ছবিটি বিভিন্ন প্রধান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজনের অতীতে গুরুতর কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ম্যানহাটনের ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউতে অবস্থিত ওই সুউচ্চ ভবনে ব্ল্যাকস্টোন, কেপিএমজি এবং এনএফএল-এর প্রধান কার্যালয়সহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে।
রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পরপরই ভবনটির চারপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঘটনাস্থলের পাশের একটি জিমে থাকা ৩১ বছর বয়সী স্পোর্টস বেটর রাস ম্যাকগি রয়টার্স-কে বলেন, 'আমি তখন ব্যায়াম করছিলাম। হঠাৎ চারপাশে চিৎকার, হইচই আর পুলিশ দেখে হতভম্ব হয়ে যাই।'
এফবিআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিস থেকেও এজেন্টরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সহায়তা করছেন।