এইচ-১বি ভিসা: ট্রাম্পের ১ লাখ ডলার ফি ঘোষণার পর স্থিতিশীল মার্কিন প্রযুক্তি খাতের শেয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য বহুল ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসার আবেদনে এককালীন বিশাল অঙ্কের ফি আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এর প্রভাব সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রযুক্তি খাতের শেয়ারে তেমনভাবে পড়েনি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, এইচ-১বি ভিসার জন্য এককালীন ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। অভিবাসন নীতিতে তার এই নতুন কড়াকড়ি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, বিশেষত শ্রম ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং দক্ষ কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কায়।
এইচ-১বি ভিসার আওতায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে। কিন্তু নতুন ফি কার্যকর হলে যেসব কোম্পানি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের খরচ আরও বাড়বে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইস্যু করা এইচ-১বি ভিসার ৭০ শতাংশের বেশি গিয়েছিল ভারতীয় নাগরিকদের হাতে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই ভিসা অনুমোদন জটিল করা হয়েছিল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। এ কারণে শিল্প সংগঠনগুলো আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ায় তাৎক্ষণিক প্রভাব বড় হবে না। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি দেখা দিলে মজুরি বাড়তে পারে এবং কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে যেতে পারে।
অ্যামাজন, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, মেটা ও মাইক্রোসফট নিয়মিতভাবে সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা স্পনসর করে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এসব কোম্পানি বিদেশি প্রকৌশলী ও ডেভেলপারদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সলিউশনস, জেপি মরগ্যান ও ইন্টেল—যারা এইচ-১বি ভিসার বড় স্পনসর—তাদের শেয়ারের দর সোমবার ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমা থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়ার মধ্যে ওঠানামা করেছে।
বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান জেফরিস জানিয়েছে, নতুন ফি যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মী পাওয়া কঠিন করে তুলবে। এতে স্থানীয় কর্মী বা গ্রিন কার্ডধারীদের চাহিদা বাড়বে। আইটি কোম্পানিগুলোকে তাদের বেশি বেতন দিতে হবে, না হলে তারা কর্মী হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। বিশ্লেষকদের মতে, এ কারণে মুনাফা ৪ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এদিকে ভারতের ন্যাসকমসহ শিল্প খাতের লবিস্ট সংগঠনগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে, বাড়তি ফি উদ্ভাবনে বাধা সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিভাবান কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার আগ্রহ কমবে।
ভারতের আইটি খাতে প্রভাব
এইচ-১বি ভিসার আবেদনকারীদের বড় অংশই ভারতীয় আইটি কর্মী। এত দিন মার্কিন 'ওয়ার্ক ভিসা' প্রোগ্রাম থেকে লাভবান হলেও এবার ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলোকে বাড়তি খরচ ও আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে।
সোমবার ভারতের আইটি খাতের শেয়ার পড়ে যায়। টেক উপ-সূচক প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে এবং এর প্রভাব পড়েছে নিফটি ৫০ সূচকেও।
যক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত ইনফোসিসের শেয়ার ১ শতাংশ বেড়েছে, আর উইপ্রোর শেয়ার ০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।
অ্যামবিট ক্যাপিটালের বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ভারতীয় আইটি কোম্পানির জন্য নতুন এইচ-১বি ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। কারণ ১ লাখ ডলার বাড়তি ফি তাদের গড় বেতনের প্রায় দ্বিগুণ, যা অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়।