ঘরে বসে অফিস করার সময় অর্ধেক কর্মীই কাজের ফাঁকে ঘুমান: জরিপ

ভিডিও মিটিংয়ে বাসায় বসে অফিস করা কর্মীদের চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ, এলোমেলো চুল বা ঘুমজড়ানো কথা—এসব দেখলে নিয়োগকর্তাদের একটু সতর্ক হওয়া ভালো। কারণ, প্রায় অর্ধেক কর্মী স্বীকার করেছেন, অফিস সময়ে বাড়ি থেকে কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে তারা ঘুমিয়ে পড়েন।
দুপুরের খাবারের পর যে ঘুমঘুম ভাব চেপে বসে, তা নতুন কিছু নয়। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ বাড়ায় অনেকেই এখন সেই তন্দ্রা এড়াতে আগ্রহী নন—যেটা অফিসে বসে কাজ করলে এতটা সহজ হতো না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গদি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যামেরিস্লিপ এক জরিপে জানিয়েছে, বাড়ি থেকে বা হাইব্রিড পদ্ধতিতে কাজ করা ১ হাজার ২ জন কর্মীর মধ্যে ৪৮ শতাংশই স্বীকার করেছেন, তারা কর্মঘণ্টার মধ্যেই মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন।
তবে এটুক শুনেই যদি নিয়োগকর্তারা এই 'ঘুম-বিরতি' ঠেকাতে বিশেষ কৌশল নিতে চান, তাহলে তাদের জরিপের আরেকটি ফল জানা জরুরি।
দেখা গেছে, যেসব কর্মী অফিস সময়ে ঘুমান বলে স্বীকার করেছেন, তাদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজার। তুলনায় জুনিয়র বা নিম্নপদস্থ কর্মীদের মধ্যে এ হার ৪৮ শতাংশ।
তবে বাসায় বসে অফিসের কাজ করা কর্মীরা দিনের মাঝে একটু ঘুমিয়ে নিলে তা নিয়ে এত উদ্বেগের কি আছে?
নিয়োগকর্তারা বলছেন, অবশ্যই আছে। কারণ, এই ছোট ছোট 'ঘুম-বিরতি' জমতে জমতে দেখা যায়, তা শেষ পর্যন্ত অফিস কর্মঘণ্টার অনেকটা সময়ই খেয়ে ফেলে।
অ্যামেরিস্লিপের জরিপ অনুযায়ী, গড়ে প্রতি সপ্তাহে ঘরে বসে অফিসের কাজ করা কর্মীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটান।
বছর শেষে হিসাব করলে দেখা যায়, এতে প্রায় ৯টি পূর্ণ কর্মদিবস (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা) ঘুমেই কেটে যায়। এবং এই সময় আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বিভিন্ন প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে অফিসের সময় ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতায় স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
প্রায় ৬০ শতাংশ জেনারেশন জেড প্রজন্মের অফিস-কর্মী স্বীকার করেছেন, তারা ঘরে থেকে অফিস করার সময় ঘুমিয়েছেন। এর তুলনায় মিলেনিয়ালদের মধ্যে এই হার ছিল ৫১ শতাংশ এবং জেনারেশন এক্সের মধ্যে ৩৯ শতাংশ।
শুধু বয়সই নয়, কর্মীদের কাজের ফাঁকে ঘুমানোর প্রবণতা কাজের ধরণেও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন ধরনের কাজের কারণে কর্মীরা সাধারণত দিনের বেলায় একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায় বা পায় না।
অ্যামেরিস্লিপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'মার্কেটিং ও ফাইন্যান্স পেশাজীবীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ কর্মী দিনের বেলা ঘুমান, যা সর্বোচ্চ। এর পরে রয়েছে হসপিটালিটি ও ফুড সেক্টর (৫৪ শতাংশ), শিক্ষা (৫৩ শতাংশ) এবং রিটেইল ও ই-কমার্স (৫১ শতাংশ) ক্ষেত্রের কর্মীরা।'
অনেক নিয়োগকর্তারাই হয়তো এই অফিস সময়ে কর্মীদের ঘুমানোর ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হতে পারেন, তবে অনেকেই এতটা চিন্তিত নন।
আসলে, অ্যামেরিস্লিপ যখন কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে জরিপ করে, তখন ৩৬ শতাংশ বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাজের সময় বিশ্রাম নেওয়ার অনুমতি দেয় অথবা এ অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নেয়।
ঘুমানোর ওপর নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এ অভ্যাসকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে, তবে শর্তসাপেক্ষে।
অ্যামেরিস্লিপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, '৭৩ শতাংশ ব্যবস্থাপক বলেছেন, কর্মীরা যদি সময়মতো কাজ শেষ করেন, তবে কাজের সময় ঘুমানোর ধারণাকে তারা সমর্থন করেন।'
এক সময় এই ধরনের নমনীয়তা অপ্রচলিত মনে হলেও, এখন এটি দূরস্থ কর্মজীবনের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
তাহলে, অধিকাংশ নিয়োগকর্তাদের সীমিত সময়ের 'ঘুম-বিরতি' নিয়ে আপত্তি না থাকলেও, কেন তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নীতিমালা গ্রহণের কথা ভাববেন?
তবে শুরুতেই জানা গেছে, ৫৮ শতাংশ ঘুমোনোর প্রবণতা থাকা কর্মী তাদের এ অভ্যাস নিয়োগকর্তাদের থেকে লুকান। তারা প্রায়ই ক্যালেন্ডারে মিথ্যা মিটিং এন্ট্রি দেন বা ব্যস্ত থাকা ভান করেন যেন মনে হয় তারা কাজ করছে।
যখন এই ধরনের চালাকি ধরা পড়ে—যেমন জরিপে ১০ শতাংশ উত্তরদাতা স্বীকার করেছেন, কাজের সময় ঘুমিয়ে থাকার সময় যখন তারা ধরা পড়েন, তখন নিয়োগকর্তারা সাধারণত ঘুমানোর চেয়ে তাদের অসাধুতা ও ছলনায় বেশি রাগান্বিত হন। যেকোনো ক্ষেত্রে, এতে বিশ্বাসহানি ঘটে এবং ক্ষোভ জন্ম নিতে পারে।
অন্যদিকে, কাজের সময় ঘুমের প্রবণতা কর্মীদের কাজের দক্ষতার ওপর প্রভাব কেমন হবে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর যাচাই করা জরুরি।
যদিও স্বল্প বিশ্রাম নেয়া সুবিধার মনে হতে পারে, তবে জরিপে দেখা গেছে, দিনের বেলায় ঘুমানো কর্মীরা যারা ঘুমাননি তাদের তুলনায় কম কার্যকারিতা, মনোযোগ, উদ্দীপনা ও শক্তি অনুভব করেন।
এর একটি কারণ হতে পারে, ২৫ শতাংশ ঘুমানোর প্রবণতা থাকা কর্মী জানিয়েছেন, ঘুম থেকে জেগে উঠে কাজে ফেরাটা তাদের জন্য প্রায়শই কঠিন হয়।
তবুও, নিয়ম মেনে এবং কাজের চাপ সামলে নিলে ঘরে বসে কাজ করা কর্মীদের কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়া যেতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে উপকারে আসতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ কর্মী বলেছেন, যারা দিনের বেলা ঘুমানোর অনুমতি দেবে এমন নিয়োগকর্তার প্রতি তারা বেশি আনুগত্য দেখাবেন।
তবে এর বিনিময়ে বেশ কিছু কর্মী বলেছেন, তারা এই অনুমতির জন্য কিছু সুবিধা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত — যেমন, কিছু ছুটি না নেয়া,
অফিসে দেওয়া খাবার না খাওয়া বা দলীয় আড্ডা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে কম অংশগ্রহণ করা। তবে এতে নিয়োগকর্তাদের জন্য কিছু সমস্যা থেকেই যায়। হয়তো তাদের মিটিংয়ে কর্মীদের মাঝে মাঝে ঘুমজড়ানো চোখ বা এলোমেলো চুল দেখেও চুপ করে থাকতে হবে।
তবুও, এতে কর্মীদের কাজের দক্ষতা বা কর্মঘণ্টা বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি না থাকলে এ ধরনের নীতি কার্যকর হতে পারে।