হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘কিছুই অর্জন করতে পারেনি’: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে 'কোনো অর্জনই' করতে পারেনি। ইসরায়েলের সঙ্গে মঙ্গলবারের যুদ্ধবিরতির পর এটি ছিল তার প্রথম প্রকাশ্যে ভাষণ। খবর বিবিসির।
খামেনি বলেন, এসব হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে 'গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাঘাত' ঘটাতে পারেনি। তিনি কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলাকে 'মারাত্মক আঘাত' হিসেবেও বর্ণনা করেন।
এদিকে, ওয়াশিংটন পুনরায় জোর দিয়ে বলেছে, তাদের হামলা ইরানের পারমাণবিক লক্ষ্যগুলোকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, চালানো অভিযানটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে গুরুতর ক্ষতি করেছে এবং তা কয়েক বছর পেছনে ফেলে দিয়েছে।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের ভেতরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো হামলায় সেগুলো 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' করে ফেলা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যেসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যাশার তুলনায় কম হতে পারে—সেসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন ট্রাম্প।
পেন্টাগনে বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ জেনারেল ড্যান কেইনের সঙ্গে উপস্থিত হয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ অভিযানে 'ঐতিহাসিক সাফল্য' এসেছে বলে দাবি করেন এবং বলেন, এতে ইরানের সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো 'অচল হয়ে পড়েছে'।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কখনো কখনো উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যে হেগসেথ আরও বলেন, ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য মার্কিন বাহিনীর কাছে নেই। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে 'বাংকার বাস্টার' বোমা দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
১৩ জুন ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ সময় জনসমক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে এক টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী নীরবতা ভাঙলেন তিনি।
খামেনি একটি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং যোগাযোগ সীমিত রেখেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা তার অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি করে। বৃহস্পতিবারের ভাষণটি তিনি কোথা থেকে দিচ্ছেন, তা প্রকাশ করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ। তবে সপ্তাহের শুরুতে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, তিনি 'নিরাপদ স্থানে' রয়েছেন।
বৃহস্পতিবারের ভিডিও ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ইরানের ওপর আবারও হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর আরও আঘাত হানা হবে। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'জয়' দাবি করেন।
তিনি বলেন, ট্রাম্প পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাব 'অতিরঞ্জিত' করেছেন। খামেনি বলেন, 'তারা কিছুই করতে পারেনি এবং তারা তাদের উদ্দেশ্যেও পৌঁছাতে পারেনি।'
কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে চালানো ইরানি হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই ঘটনাটি ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। কোনো হামলা হলে শত্রু ও আগ্রাসনকারীর জন্য এর মূল্য অবশ্যই খুব বেশি হবে।'
ওই হামলায় কেউ নিহত হননি, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, হামলা শুরুর আগেই তাদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছেছিল। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ঘাঁটিতে কোনো ক্ষতিও হয়নি।
এদিকে, সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানকে পুনরায় আলোচনার টেবিলে আনতে হোয়াইট হাউস বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে—ইরানকে বেসামরিক, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণবিহীন পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য অর্থায়নের সুযোগ করে দেওয়া।
তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনার পরিকল্পনা নেই।
১৩ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হয়, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ার করে বলেন, 'ইরানকে থামানো না গেলে, তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।'
এর একদিন আগে, বৈশ্বিক পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) বোর্ড অব গভর্নরস ঘোষণা দেয়, ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
ইরান বারবার বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়নি।
বৃহস্পতিবার ইরানি পার্লামেন্ট একটি বিল পাস করেছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে দেশটির সহযোগিতা শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মানে, এখন থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেবে না।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টানা ১২ দিনের বিমান হামলায় ৬১০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের পক্ষে নিহত হয়েছে ২৮ জন।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তারা ইরানের ফোর্দো, নাটানজ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। এরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন। যা এখনও বহাল আছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বুধবার বলেন, হামলার সময় তেহরান তাদের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারে—এমন সম্ভাবনা রয়েছে।