সামরিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি ইরানের, নিরাপত্তাঝুঁকিতে ইরাকের মার্কিন দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

নিরাপত্তা হুমকি বেড়ে যাওয়ায় ইরাকের বাগদাদে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসে অপরিহার্য নয় এমন কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকারি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
তবে কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানায়, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তথ্য পান যে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুত। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে,পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইরাকে থাকা মার্কিন স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটেই কিছু মার্কিন নাগরিককে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এমন এক সময়ে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হলো, যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা সম্প্রতি স্থবির হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, 'আমরা আমাদের প্রতিটি দূতাবাসে কর্মীসংখ্যা ও উপস্থিতির যথোপযুক্ততা নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করি। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইরাকে আমাদের উপস্থিতি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
গেল বুধবার ওয়াশিংটনের কেনেডি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'বাগদাদ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে—এই বিবেচনায় আমেরিকানদের সেখান থেকে সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক কী ঘটে।'
তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, 'আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেব না।'
ট্রাম্প বরাবরই তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী ছিলেন। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে।
তবে বুধবার তিনি বলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করবে বলে তার আস্থা কমে যাচ্ছে। তবে চুক্তি না হলে ইরানে সামরিক হামলার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
পারমাণবিক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালেও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘোষণাটি আসলেই নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে এসেছে নাকি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে—তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালালে তারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালাবে।
রয়টার্স জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ কুয়েত ও বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মার্কিন সেনা সদস্যদের পরিবারের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন।
বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের এক কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে পেন্টাগনের একজন প্রতিনিধি বলেন, ইরান এমন এক পথে এগোচ্ছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি কিছু বলে মনে হচ্ছে।
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।
যদিও পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা, দেশটি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ভিয়েনায় বৈঠকে ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রস্তাব পাস করতে পারে।
ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে তার 'সমুচিত জবাব' দেবে ইরান। এদিকে ইরানের এই সংকট নিরসনে 'বাস্তব সহায়তা' দিতে প্রস্তুত রাশিয়া।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ইরানের পরমাণু উপাদান রাশিয়ায় সরিয়ে নিয়ে তা বেসামরিক জ্বালানিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির অধীনস্থ মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস এক সতর্কবার্তায় জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক বাণিজ্যপথে ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
মার্কিন কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ইরাক ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। নিরাপত্তা অনিশ্চয়তা থেকেই সরবরাহ বিঘ্নের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে ইরাকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।