মাস্কের আচরণ তার ‘কেটামিন নেওয়ার’ ফল কি না জানতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প

গত ৪৮ ঘণ্টায় ইলন মাস্কের আচরণে তার তথাকথিত মাদকসেবনের প্রভাব রয়েছে কি না—এমন প্রশ্ন নিজ ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও উপদেষ্টাদের কাছে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রযুক্তি জগতের এই বিতর্কিত শীর্ষ ধনকুবেরের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ বোঝার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। যদিও প্রকাশ্যে তিনি বিষয়টি নিয়ে খুব একটা উদ্বেগ প্রকাশ করেননি, সিএনএন-কে দেওয়া এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, বিষয়টি তার মনোযোগের বাইরে নয়।
ট্রাম্প বলেন, তিনি এমন একজনের পেছনে সময় ব্যয় করতে নারাজ, যিনি মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ওভাল অফিস থেকে 'একটি বিশাল সোনার চাবি' পেয়েছিলেন, অথচ এরপর থেকেই তাকে (ট্রাম্পকে) অবমাননা করে চলেছেন। শুক্রবার সকালে সিএনএন-এর ডানা বাশকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ফোন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'আমি ইলনের কথা ভাবছিও না' এবং জানান, 'কিছু সময়ের জন্য' তিনি মাস্কের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখবেন না।
তবু ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে এই উন্মুক্ত ও তিক্ত সম্পর্কচ্যুতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে—বিশেষত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অঙ্গনে।
শুক্রবার রাতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, তিনি মাস্কের কিছু সরকারি চুক্তি বাতিলের বিষয়টি 'একবার খতিয়ে দেখবেন'। বিরোধ তুঙ্গে থাকাকালে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি এর আগেও একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। তার ভাষায়, 'আমেরিকা মাস্ককে ছাড়াও চলতে পারবে।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'আমেরিকা প্রায় সবাইকে ছাড়াই টিকে থাকতে পারে—শুধু আমাকে ছাড়া।' যদিও বক্তব্যের শেষ অংশটায় তিনি খানিকটা রসিকতা করছিলেন বলেই যোগ করেন।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, মাস্কের মাদক ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন, তবে এ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। এয়ার ফোর্স ওয়ানে তিনি বলেন, 'আমি তার মাদক ব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমি জানি না—আমি জানি না তার অবস্থা কী।' একইসঙ্গে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনকে 'খুবই অন্যায্য' বলে সমালোচনা করেন।
সিএনএন মাস্কের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এক সপ্তাহ আগে ওভাল অফিস ত্যাগের সময়ও মাস্ক সাংবাদিকদের এ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান এবং উল্টো সংবাদমাধ্যমের সমালোচনায় মুখর হন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মাস্কের মাদক সেবনের মাত্রা পূর্বের ধারণার তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিবেদনে মাস্কের ঘনিষ্ঠদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০২৪ সালে তিনি প্রায়ই—কখনও কখনও প্রতিদিন—কেটামিন সেবন করতেন এবং তা অন্যান্য মাদকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতেন। একই বছরে ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ মহলে মাস্কের জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে।
তবে ২০২৪ সালে ডন লেমনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, তিনি নেতিবাচক মানসিক অবস্থা মোকাবিলায় প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে 'অল্প পরিমাণে' কেটামিন গ্রহণ করেন; তবে অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে তার অপব্যবহার করা সম্ভব নয়। টাইমস-এর প্রশ্নের জবাবে মাস্ক বা তার আইনজীবী কেউই মন্তব্য করেননি। সিএনএন-ও এ বিষয়ে মাস্কের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার—যার স্ত্রী কেটি মিলার মাস্কের হয়ে কাজ করতে সরকারি চাকরি ছেড়েছেন—সিএনএন-কে বলেন, টাইমস-এর প্রতিবেদনে মাস্কের মাদক ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি তাকে উদ্বিগ্ন করেনি।
ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যকার বিরোধের সূত্রপাত ঘটে মূলত তাদের নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ট্রাম্পের সহযোগীরা জানান, প্রেসিডেন্ট বর্তমানে তার এজেন্ডা বিল নিয়েই বেশি মনোযোগী, যা নিয়েই মূলত এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তিনি দলকে বলেছেন, বিলটি এগিয়ে নিতে হবে।
শুক্রবার সকালে ট্রাম্পের অনলাইন কার্যক্রম ছিল শুধুমাত্র অর্থনীতি-সংক্রান্ত পোস্টে সীমাবদ্ধ, যেখানে মাস্কের কোনো উল্লেখ ছিল না। তিনি সকালে ফোনে কথা বলেন—তবে মাস্কের সঙ্গে নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে, যাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এছাড়া তিনি পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও আসন্ন ন্যাটো সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন এবং সন্ধ্যার আগে নিউ জার্সির বেডমিনিস্টারের পথে একটি গল্ফ কোর্স পরিদর্শন করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ও সন্ধ্যায় ট্রাম্প ও মাস্ক সামাজিক মাধ্যমে একে অপরকে নিয়ে তীব্র মন্তব্য বিনিময় করলেও, শুক্রবারের মধ্যেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের এই ভাঙন কংগ্রেসে বিবেচনাধীন ট্রাম্পের এজেন্ডা বিল, মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ কিংবা রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যতের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্টতা নেই।