চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে

সম্প্রতি হিমালয় অঞ্চলের বিতর্কিত ভূখণ্ড কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত আকাশযুদ্ধ একটি নতুন বাস্তবতা সামনে এনেছে। খবরে প্রকাশ, এই সংঘর্ষে ভারত তার একাধিক যুদ্ধবিমান হারিয়েছে— যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, রাশিয়ার সুখই-৩০ এমকেআই, মিগ-২৯ এবং একটি ড্রোন। যদি এই তথ্য সঠিক হয়, তাহলে এটি শুধু ভারতের আকাশ শক্তির প্রাধান্যকেই চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং চীনা প্রযুক্তির কার্যকারিতাকেও নতুন আলোকে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।
আকাশপথে এই সংঘর্ষ পশ্চিমা ও রুশ উৎপাদকদের তুলনায়— চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কার্যকারিতাকে সামনে আনে, তেমনি একথাও মনে রাখতে হবে যে, এখানে দুই পক্ষের মানবীয় দক্ষতা— পাইলট ও এয়ার কন্ট্রোলারদের বিচক্ষণতা ও কৌশলগত সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
চীনা প্রযুক্তির জয়জয়কার যুদ্ধক্ষেত্রে
অবশ্য ট্যাকটিক্যাল বা কার্যক্ষেত্রে এ সংঘর্ষে পাকিস্তানের যে কৌশলগত সুবিধা দেখা গেছে, তার অন্যতম কারণ চীনের তৈরি পিএল-১৫ই নামক 'বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ' বা (বিভিআর) ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বৈমানিকের দৃষ্টিসীমার বাইরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম বলেই এমন নামকরণ। ভারতের পাঞ্জাবে পাওয়া এই ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ধ্বংসাবশেষ থেকে সাম্প্রতিক সংঘাতে এর ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্কের মতে, পিএল-১৫ মিসাইল যুক্তরাষ্ট্রের এআইএম-১২০ অ্যামর্যাম-এর সমতুল্য এবং রাশিয়ার আর-৭৭ কে ছাড়িয়ে গেছে। এর এসা রাডার ও ডুয়াল-পালস রকেট মোটর— এটিকে তুলনামূলকভাবে আরও কার্যকর করেছে।
পাশাপাশি, চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান এখন পাকিস্তানের মূল এয়ার সুপিরিয়রিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই বিমানগুলোর রয়েছে আধুনিক রাডার, ইনফ্রারেড সার্চ এবং ট্র্যাক সিস্টেম, ইলেকট্রনিক সাপোর্ট মেজার্স, মিসাইল অ্যাপ্রোচ ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং উন্নত ডেটালিংক সুবিধা। এক কথায়, এটি একবিংশ শতকের যুগোপযোগী প্রযুক্তি-সজ্জিত এক 'পঞ্চম প্রজন্মের নিকটবর্তী' এক ফাইটার। এ ধরনের যুদ্ধবিমানকে ৪.৫ প্লাস প্রজন্মের ধরা হয়। ভারতের রাফালও একই প্রজন্মের।
ভারতের দুর্বলতা এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘাটতি
এর বিপরীতে, ভারতের যে ফ্রান্স থেকে আনা রাফাল বিমান রয়েছে, তা নিয়ে অনেক আশাবাদ থাকলেও, এর সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ছে। এমনকী ফরাসি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাফালের সেন্সর ও স্টেলথ ঘাটতির কারণে— এটি আধুনিক যুদ্ধে 'সাপোর্টিং রোল' বা সহায়ক ভূমিকায় নেমে যেতে পারে। ভারতের রুশ তৈরি সুখই-৩০ বিমানেরও রেডিনেস রেট মাত্র ৬০ শতাংশ— রুশ যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
আরেকটি বড় দুর্বলতা হলো এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি) সক্ষমতা। পাকিস্তানের হাতে থাকা সুইডেনের তৈরি সাব-২০০০ প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে তারা ৪৫০ কিমি দূর থেকে শত্রু বিমান শনাক্ত করতে পারে, বিশেষ করে যেগুলো নিচু দিয়ে উড়ে রাডারকে ফাঁকি দিতে চায়। ভারতের হাতে মাত্র ৬টি এইডব্লিউঅ্যান্ডসি ইউনিট রয়েছে, যা তাদের বিশাল আকাশসীমা কভার করার জন্য খুবই অপ্রতুল।
চীনের 'ফাইটার ডিপ্লোমেসি' ও বৈশ্বিক প্রভাব
এই যুদ্ধে পাকিস্তানের সাফল্য কেবলমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে ভারসাম্য বদলাচ্ছে না, বরং চীনের যুদ্ধবিমান বিক্রির ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত বিজয় এনে দিতে পারে। এখন পর্যন্ত চীনের যুদ্ধবিমানের গ্রাহক তালিকা বেশ সীমিত— পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সুদান, জাম্বিয়া এবং উত্তর কোরিয়া। তবে পাকিস্তানের সাফল্যের আলোকে মিশর, ইরান ও সৌদি আরবের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আগ্রহ বাড়তে পারে।
চীনের এই 'ফাইটার ডিপ্লোমেসি' যুদ্ধবিমান বিক্রির মাধ্যমে শুধু সামরিক নির্ভরতা তৈরি করছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার পথও করে দিচ্ছে বেইজিংকে।
কাশ্মীরকে ঘিরে যুদ্ধনীতি
২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই এক নতুন কৌশলগত ব্যাকরণ তৈরি করেছে। পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক জবাবদানে পিছপা হচ্ছে না। অপরদিকে, ভারতের প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা দীপেন্দ্র হুদা বলছেন, বালাকোট হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে, নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে বিমান শক্তি ব্যবহার করলেও— তা পারমাণবিক যুদ্ধ ডেকে আনে না।
এক কথায়, এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ শুধু ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের গতিপথ বদলে দিচ্ছে না, বরং চীনের সামরিক প্রযুক্তি ও যুদ্ধনীতির বৈশ্বিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার দিকেও ইঙ্গিত করছে। একদিকে ভারত যখন পুরনো রুশ ও পশ্চিমা প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত, তখন পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে আকাশযুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করছে। দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে এখন এক নতুন ভারসাম্য গড়ে উঠছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে বেইজিংয়ের তৈরি জেট ও মিসাইল।