শুল্ক কমাতে রাজি যুক্তরাষ্ট্র-চীন, ৯০ দিনের জন্য স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে। সোমবার এই ঘোষণা দিয়েছে দেশ দুটি। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, 'গঠনমূলক ও দৃঢ়' আলোচনার পর উভয় দেশ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি 'পারস্পরিক' শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
এক যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশ জানায়, তারা আগামী ৯০ দিনের জন্য নিজ নিজ শুল্ক স্থগিত রাখবে এবং এই সময়ের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে, কেউই সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না।'
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে যে দীর্ঘ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটল এ চুক্তির ফলে। অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই কার্যাদেশ বন্ধ রেখেছিল; আশায় ছিল, দুই দেশ কোনো চুক্তিতে পৌঁছালে শুল্ক কমবে এবং ব্যবসা ফের চাঙা হবে।
চীনা কারখানাগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আদেশ আসা ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। এতে দেশটির অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ পড়েচিল।
তবে শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাজারে চাঙা ভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে।
এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৭.২০০১ ইউয়ান, যা ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার বলেন, আলোচনায় চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মূল দাবি ছিল ফেন্টানিল তৈরির রাসায়নিক উপাদানগুলোর চোরাচালান রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। বেসেন্ট বলেন, চীনারা যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সংকটের 'ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছে'।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না—এই অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সেই শুল্ক এখনও বলবৎ রয়েছে।