বাংলাদেশকে এড়িয়ে মিয়ানমার হয়ে সমুদ্রপথে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হবে উত্তর-পূর্ব ভারত: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে কলকাতার সংযোগ রক্ষায় বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে বিকল্প রুটের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত নতুন এ সিদ্ধান্ত নিল।
শনিবার (১৭ মে) এক প্রতিবেদনে নতুন এ পরিকল্পিত রুটের কথা জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। আগের শাসনামলে ট্রানজিট রুট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনা চললেও তা এখন স্থগিত রয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই সমুদ্র ও মিয়ানমারের সড়কপথ ব্যবহার করে বিকল্প রুটের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে দিল্লি।
মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত প্রস্তাবিত চার লেনের একটি মহাসড়কটি হবে বিকল্প রুটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এটি মিয়ানমারের কালাদান মাল্টি মডেল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের সম্প্রসারণ হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)।
এই মহাসড়ক কলকাতা সমুদ্রবন্দরকে মিয়ানমারের রাখাইনের সিত্তে বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এরপর সেখান থেকে মিয়ানমারের পালেতওয়া হয়ে তা ভারতের মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত পৌঁছাবে।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে এক মন্তব্যে এনএইচআইডিসিএলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত এ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত মার্চে চীন সফরে গিয়ে বেইজিংয়ে এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য 'স্থলবেষ্টিত' এবং ওই অঞ্চলের জন্য 'সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ'। ভারতীয় নেতারা এ মন্তব্যকে 'আক্রমণাত্মক' বলে অভিহিত করেন।
শিলংয়ের কাছে মাওলিংখুং থেকে শিলচরের পাঁচগ্রাম পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ক হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম উচ্চ-গতির করিডোর।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এনএইচআইডিসিএল, যার কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে, কালাদান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর না করেই ভাইজাগ ও কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে।
বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর একমাত্র স্থলসংযোগ হলো শিলিগুড়ির 'চিকেনস নেক' করিডোর।
ভারতীয় গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে ভারতের জন্য দুটি বিকল্প পথ থাকলেও বাংলাদেশ 'বঙ্গোপসাগর ব্যবহার ও জলপথে চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে'। ফলে ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে কালাদান প্রকল্পকে বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এনএইচআইডিসিএল জানিয়েছে, শিলং-শিলচর অংশটি মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বরাক উপত্যকার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। এটি ভারতের 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতির বাস্তবায়নেও সহায়ক হবে।