যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ সত্ত্বেও ভারতকে তেল বিক্রি চালিয়ে যাবে রাশিয়া

মার্কিন শুল্ক ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কঠোর সমালোচনার মুখেও ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছে মস্কো। আজ বুধবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ভারতে রাশিয়ার উপ-বাণিজ্য প্রতিনিধি ইয়েভজেনি গ্রিভা।
তিনি বলেন, ভারতের রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি বর্তমান মাত্রায়ই স্থির থাকবে। এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরআগে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা-শুল্ক আরোপ করেন এবং রাশিয়ার তেল কেনার কারণে তা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন। এই শুল্ক হার কার্যকর হবে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বার্ষিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বড় ধরনের সংকটে পড়বে।
শাস্তিমূলক শুল্কের অর্ধেকের কারণ হলো নয়াদিল্লির রুশ তেল ক্রয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মতে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অর্থায়নে সহায়তা করছে। তবে ভারত বলেছে, তারা সবসময় সবচেয়ে সস্তা উৎস থেকে তেল কেনার অধিকার রাখে এবং ওয়াশিংটনের শুল্ককে "অযৌক্তিক" বলে আখ্যা দিয়েছে।
গ্রিভা জানান, রাশিয়া ভারতকে প্রায় ৫ শতাংশ মূল্যছাড়ে তেল বিক্রি করে থাকে, ফলে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির জন্য অন্য বিকল্প খুবই সীমিত। তিনি আরও বলেন, দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়তে পারে।
ভারতের জন্য রাশিয়ার তেলের প্রধান সুবিধা— কম মূল্যে ক্রয় করার দিকটি, যা দেশটির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের অন্যতম বড় হাতিয়ার।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে "বন্ধু" হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছেন। আগস্টের শেষ দিকে মোদি চীন সফরে যাবেন—সাত বছরের মধ্যে এটি তার প্রথম সফর—যেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বর্তমানে তিন দিনের সফরে রাশিয়া রয়েছেন, যেখানে তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বৈঠক করছেন।
এরইমধ্যে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট মঙ্গলবার আবারও সতর্ক করে বলেছেন, ভারত যদি রুশ তেল কেনা চালিয়ে যায় তবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক হার বাড়াবে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত এভাবে "লাভবান" হচ্ছে এবং "ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো" এতে সরাসরি সুবিধাভোগী হচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং রাশিয়া থেকে তেল কিনত খুবই সামান্য। কিন্তু ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে, রাশিয়ার তেলের ওপর জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর প্রতি ব্যারেলে ৬০ ডলারের মূল্যসীমা আরোপের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এ সীমা ক্রেমলিনের তেলখাতের রাজস্বে আঘাত করলেও— বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহও যাতে সচল থাকে সেই লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছিল। এজন্যই ক্রেমলিনকে তেল বিক্রিতে মূল্য ছাড় দিতে হচ্ছে।
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি দাঁড়িয়েছে দৈনিক প্রায় ১৭ লাখ ব্যারেল, যা দেশের মোট বৈদেশিক ক্রয়ের প্রায় ৩৭ শতাংশ। এ মাসের শুরুতে সাময়িক বিরতির পর আবারও ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত রিফাইনারিগুলো রাশিয়ান তেল কিনতে শুরু করেছে বলে ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও রাশিয়া রয়েছে চতুর্থ স্থানে। রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক রোমান বাবুশকিন জানিয়েছেন, মস্কো শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের আরও পণ্য আমদানির জন্য প্রস্তুত এবং দেশটিকে স্থানীয়ভাবে জেট ইঞ্জিন উৎপাদনে সহায়তা করবে।