হার্ভার্ডকে আর নতুন অনুদান দেবে না ট্রাম্প প্রশাসন

গবেষণা খাতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে আর কোনো সরকারি অনুদান দেবে না ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লেখা এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহন এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
চিঠিতে ম্যাকমাহন বলেন, 'হার্ভার্ড উচ্চশিক্ষার সাথে তামাশা করেছে। সেহেতু তারা আর কোনো সরকারি অনুদানের আবেদন করতে পারবে না, কারণ কিছুই দেওয়া হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'হার্ভার্ড এখন থেকে কেবলমাত্র একটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলবে। তাদের বিশাল তহবিল এবং ধনী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই এখন অর্থ সংগ্রহ করতে হবে।'
গত মাসে হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সরকারি অর্থায়ন স্থগিত করে দেয়ার পর নতুন করে গবেষণা তহবিল বন্ধের এ ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাম্পাসে বাড়তে থাকা ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।
হার্ভার্ড প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে ম্যাকমাহন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি 'শিক্ষার মানে অবক্ষয় ঘটিয়েছে' এবং এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি দিয়েছে, যারা সহিংস আচরণ করে এবং আমেরিকার প্রতি অবজ্ঞা দেখায়।
চিঠিতে ম্যাকমাহন আরও বলেন, 'এইসব শিক্ষার্থীরা কোথা থেকে আসে, কারা তারা, কীভাবে তারা হার্ভার্ডে বা আমাদের দেশে প্রবেশ করে — এবং কেন এতটা ঘৃণা?'
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, 'এইসব প্রশ্নের উত্তর আমেরিকান জনগণের প্রাপ্য। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হার্ভার্ড কেন এ বিষয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর দেয় না?'
অন্যদিকে, হার্ভার্ড প্রশাসন এরই মধ্যে এই তহবিল স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, শিক্ষা সচিবের নতুন চিঠি উচ্চশিক্ষার ওপর 'ভীতিকর প্রভাব' ফেলবে এবং তাদের মামলার জবাবে 'বৈধ অনুদান অবৈধভাবে আটকে রাখার হুমকি' বহন করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'হার্ভার্ড আইন মেনে চলবে, মত প্রকাশের বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত রাখবে এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি, গবেষণা ও উদ্ভাবনকে দমন করতে সরকারের বেআইনি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'
উল্লেখ্য, গত বছর গাজায় যুদ্ধের বিরোধিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
হার্ভার্ডের গঠিত দুটি টাস্কফোর্স গত মাসে পৃথক দুটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে ইহুদি ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী ও কর্মীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
এসব রিপোর্টের পর হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, 'আমাদের ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থী তাদের পরিচয় বা বিশ্বাসের কারণে নিজেকে উপেক্ষিত মনে করছে।'
উল্লেখ্য, ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল রাজনীতিক বহুদিন ধরে হার্ভার্ড ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে চরম বামপন্থী মতাদর্শ ছড়ানো এবং ডানপন্থীদের দমন করার অভিযোগ করে আসছেন।