১০০% মার্কিন শুল্কারোপের হুমকিতে বিচলিত নয় রাশিয়া

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে নতুন করে অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দেন এবং জানান, অর্থ জোগাবে ইউরোপীয় দেশগুলো। একইসঙ্গে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেন তিনি–যেটি কার্যকর হলে রাশিয়ার যুদ্ধবাজেট বড় ধাক্কা খেতে পারে। খবর বিবিসি'র।
তবে মস্কোর শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সোমবার রুশ শেয়ারবাজার ২.৭ শতাংশ বেড়েছে।
এর পেছনে কারণও আছে। রাশিয়া আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করেছিল ট্রাম্পের কাছ থেকে।
রাশিয়ার জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড 'মস্কভস্কি কোমসোমোলেটস'-এর সোমবারের সংস্করণে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিল, 'রাশিয়া ও আমেরিকা ইউক্রেন ইস্যুতে নতুন করে সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে।' শিরোনাম ছিল: 'ট্রাম্পের সোমবারের চমক আমাদের দেশের জন্য সুখকর হবে না।'
বাস্তবে সেটি সুখকর ছিল না, তবে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত বা বিধ্বংসীও ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর যে পরোক্ষ শুল্ক (সেকেন্ডারি ট্যারিফ) আরোপ হতে যাচ্ছে, তা কার্যকর হবে ৫০ দিন পর।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, 'আমরা সেকেন্ডারি ট্যারিফ দিতে যাচ্ছি। যদি ৫০ দিনের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে খুব সোজা—সেটি হবে ১০০ শতাংশ হারে।'
এই সময়ের মধ্যে মস্কোর হাতে পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ থাকবে এবং সে সময়টুকু কাজে লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন আরও বিলম্বিত করা সম্ভব হতে পারে।
তবু, ট্রাম্পের ঘোষণাকে রাশিয়ার প্রতি আরও কঠোর অবস্থান হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে, এটি প্রকাশ করে ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর না করার বিষয়ে বিরক্ত।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।
মাসের পর মাস মস্কোর তরফে উত্তর আসছিল: 'হ্যাঁ, তবে...'
মার্চ মাসে যখন ট্রাম্প একটি বড় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, তখন রাশিয়া তা স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তার আগে, মস্কোর শর্ত ছিল—পশ্চিমা সামরিক সহায়তা ও কিয়েভের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করতে হবে, ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনও বন্ধ হতে হবে।
রাশিয়া এখনো জোর দিয়ে বলছে, তারা শান্তি চায়। তবে তার আগে 'যুদ্ধের মূল কারণগুলো' সমাধান করতে হবে। আর এই কারণগুলো রাশিয়া যেভাবে দেখে, ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো তা একেবারে ভিন্নভাবে দেখে।
ক্রেমলিনের যুক্তি, যুদ্ধের পেছনে দায়ী বিদেশি হুমকি—কিয়েভ, ন্যাটো এবং 'সমষ্টিগত পশ্চিম' থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তার ওপর এই হুমকিই যুদ্ধ ডেকে এনেছে।
তবে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন, ন্যাটো কিংবা পশ্চিম রাশিয়া আক্রমণ করেনি। বরং মস্কোই ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার হামলা চালিয়েছিল, যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধের সূচনা হয়।
অনেকদিন ধরেই 'হ্যাঁ, তবে...' কৌশল ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গেছে মস্কো, একইসঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে।
রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ইউক্রেন নিয়ে শান্তিচুক্তির আশায় ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে শক্তি ব্যবহারের বদলে বারবার সুযোগ বা ছাড় দেওয়ার পথ নিয়েছে।
তবে ক্রেমলিনের সমালোচকরা শুরু থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছিলেন—এই 'হ্যাঁ, তবে...' মানে আসলে সময় নেওয়া। রাশিয়া দেরি করছে নিজের সুবিধামতো পরিস্থিতি গড়ার জন্য। তবুও ট্রাম্প আশা করছিলেন, তিনি কোনোভাবে ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চুক্তিতে রাজি করাতে পারবেন।
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্টের তেমন কোনো তাড়া দেখা যাচ্ছে না। ক্রেমলিন মনে করে, যুদ্ধক্ষেত্রে এখন তারাই এগিয়ে আছে। রাশিয়া শান্তির কথা বললেও, সেটি তাদের শর্তের ওপর চায়।
এই শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করা। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণাতেই পরিষ্কার, সেটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ট্রাম্প এখন বলছেন, পুতিনের ওপর তিনি 'খুব খুশি নন'।
তবে হতাশা একমুখী নয়। রাশিয়াও এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
সোমবার রুশ সংবাদপত্র 'মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস' লিখেছে, '[ট্রাম্পের] স্পষ্টই ক্ষমতার ভ্রম রয়েছে। আর তিনি খুব বেশি কথা বলেন।'