ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ: ৮৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে চীনের জবাব

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটি বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে। এর আগে মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল বেইজিং।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে কোনো দেশের দেওয়া সর্বশেষ পাল্টা জবাব এটি।
এর আগে বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে ট্রাম্প ডজনখানেক দেশের পণ্যের ওপর 'পারস্পরিক' শুল্ক কার্যকর করেন। এর আওতায় চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১০৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) বুধবারের মধ্যে তাদের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী কয়েক দশকে গড়ে ওঠা বাণিজ্যব্যবস্থাকে ট্রাম্পের এ শুল্ক বড় ধাক্কা দিয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বড় বড় কোম্পানির বাজারমূল্য থেকে ট্রিলিয়ন ডলার হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
বেইজিংয়ের আগের পাল্টা শুল্কের জবাবে গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে ৫৪ শতাংশে উন্নীত করেন।
বুধবার চীন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত 'অনিবার্য'। পাশাপাশি তারা হুঁশিয়ার করে দেয়, চীনা পণ্যের ওপর চাপ বাড়ালে তারা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার 'সংকল্প ও সামর্থ্য' রাখে।
শুল্ক আরোপের ফলে চীনের মুদ্রা ইউয়ান প্রবল চাপের মুখে পড়ে। অফশোর মার্কেটে ইউয়ানের মান নেমে আসে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তবে রয়টার্সকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইউয়ানের দরপতন ঠেকাতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ডলার কেনা কমিয়ে দিতে বলেছে।
এদিকে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়াবে।
'পরিস্থিতি বিপজ্জনকভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হিসেবে চীন এ বেপরোয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও দৃঢ় আপত্তি জানাচ্ছে,'—বুধবার ডব্লিউটিওতে পাঠানো চীনা মিশনের বিবৃতিতে বলা হয়।
বাজারে ধস
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১৯৫০-এর দশকে সূচক চালুর পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে। সূচকটি এখন 'মন্দাবাজার'-এর (বেয়ার মার্কেট) কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।
এ অস্থিরতায় মার্কিন ট্রেজারি বন্ডেও বড় ক্ষতি হয়। বিনিয়োগকারীরা এমনকি নিরাপদ সম্পদও বিক্রি করে ফেলছেন। অন্য বড় মুদ্রাগুলোর তুলনায় ডলারও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বাজারের এমন বিপর্যয়কে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না ট্রাম্প। বরং তিনি শুল্ক আদৌ স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা তৈরি করছেন। কখনো এ পারস্পরিক শুল্ককে 'স্থায়ী' বলছেন, আবার দাবি করছেন—এ শুল্ক বৈশ্বিক নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বুধবারই ট্রাম্পের শুল্কের জবাবে প্রথম প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ অনুমোদন দিতে পারে। এতে চীন ও কানাডার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোবে তারা।
রয়টার্সের হাতে আসা এক নথি অনুযায়ী, ইইউর বাণিজ্যনীতি পরিচালনাকারী ইউরোপীয় কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের মোটরসাইকেল, পোলট্রি, ফল, কাঠ, পোশাক এমনকি ডেন্টাল ফ্লসসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব শুল্কের বেশিরভাগই ২৫ শতাংশ হারে কার্যকর হবে এবং তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে।