নাগরিকদের ‘চাষা’ বলায় জেডি ভ্যান্সের তীব্র সমালোচনা চীনের

এক সাক্ষাত্কারে চীনের নাগরিকদের 'চাষা' বলে উল্লেখ করায় মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সমালোচনা করেছে চীন।
ভ্যান্সের এই উক্তি নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবো-তে দেশটির নাগরিকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ ও পরিহাস করেছেন। তারা বলেছেন, ভ্যান্স এর আগে নিজেই নিজেকে 'হিলবিলি' [গ্রাম্য] বলে পরিচয় দিয়েছিলেন, তাই অন্যদেরও তেমনই মনে করছেন।
গত বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় ভ্যান্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজার-বিধ্বংসী শুল্ক নীতির পক্ষে সাফাই দেন এবং 'বিশ্ববাদী অর্থনীতির' সমালোচনা করেন।
ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স বলেন, 'বিশ্ববাদী অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিয়েছে?'
তিনি আরও বলেন, 'এর উত্তর হচ্ছে মূলত দুটি নীতির ওপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে- বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়া, যা আমরা অন্য দেশগুলো থেকে জিনিসপত্র কিনতে ব্যবহার করি।'
ভ্যান্স বলেন, 'আরও পরিষ্কার করে বললে- আমরা চীনের চাষাদের কাছ থেকে ঋণ নেই এবং সেই অর্থ দিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য কিনি।'
মঙ্গলবার প্রাত্যাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভ্যান্সের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'এটি একদিকে বিস্ময়কর এবং অন্যদিকে দুঃখজনক; যে এই ভাইস প্রেসিডেন্ট এমন অজ্ঞ ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।'
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভ্যান্সের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছে সিএনএন।
ভ্যান্সের সাক্ষাত্কারের ক্লিপগুলো এই সপ্তাহে চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং চীনজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
চীন এমন একটি দেশ যার কারখানাগুলো শিল্প রোবট দিয়ে ভর্তি, শহরগুলোজুড়ে দেশীয় বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল করছে এবং দেশটির প্রত্যন্ত জেলাগুলোও উচ্চ-গতির রেলপথ দ্বারা সংযুক্ত।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস- এর সাবেক সম্পাদক হু শিজিন মাইক্রোব্লগিং সাইট উইবো-তে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন,, ''গ্রামীণ আমেরিকা থেকে উঠে আসা এই প্রকৃত 'চাষাদের' জ্ঞানের অভাব আছে বলে মনে হচ্ছে।''
তিনি আরও লেখেন, ''অনেকেই তাকে সচক্ষে চীন দেখতে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।''
ভ্যান্সের মন্তব্যের পর সোমবার রাতেই উইবোতে একটি হ্যাশট্যাগ টপ ট্রেন্ডিং টপিক হয়ে উঠেছিল। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত এটি ১৪০ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে।
একজন মন্তব্য করেছেন, 'দেখুন এই হলো তাদের আসল চেহারা — বরাবরের মতোই অহংকারী ও অভদ্র।' এই মন্তব্যে ২,৯০০টি লাইক পড়েছে।
আরেকটি মন্তব্যে বলা হয়েছে, "আমরা চাষা হতে পারি; তবে আমাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা উচ্চ-গতিসম্পন্ন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সবচেয়ে শক্তিশালী সরবরাহ সক্ষমতা এবং সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং ও ড্রোন প্রযুক্তি। এমন চাষারা খুব দারুণ, তাই না?'
অন্যরা ভ্যান্সের মন্তব্যের জবাবে পরিহাস করে তার নিজের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসার দাবির কথা উল্লেখ করেছেন।
২০১৬ সালের নিজের আত্মজীবনী 'হিলবিলি এলিজি'-তে ভ্যান্স নিজেকে একটি একটি কঠিন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এই বর্ণনা তার বর্তমান মন্তব্যের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক বলে মনে হচ্ছে।
বইটিতে ভ্যান্স তার দরিদ্রতা, নির্যাতন এবং মায়ের মাদকাসক্তির কারণে বিপর্যস্ত শৈশবের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অ্যাপালাচিয়া অঞ্চলে কাটিয়েছেন। এই অঞ্চলটির কথা ধনী এলিটরা ভুলেই গেছে বলে মনে করতেন তিনি।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে সাবেক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ভ্যান্সের লেখা এই বই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং এটি শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ট্রাম্পের প্রভাব বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে মনে করা হয়েছিল।