ইউক্রেনে নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে একমত নয় ইউরোপ: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

ইউক্রেনে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পর সেখানে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপের মিত্ররা একমত হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তবে কিছু দেশ এতে অংশ নিতে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
বৃহস্পতিবার প্যারিসে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাসহ প্রায় ৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেন মাখোঁ। 'ইচ্ছুকদের জোট' নামে পরিচিত এই জোটের তৃতীয় বৈঠকটি ইউক্রেনকে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে আয়োজিত হয়, যেখানে মস্কোর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পথ খোঁজা হচ্ছে।
এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সংঘাত নিরসনের জন্য চাপ দিচ্ছেন।
সম্মেলনের পর মাখোঁ বলেন, 'এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সর্বসম্মতি প্রয়োজন নেই।' তিনি জানান, ইউক্রেনে একটি 'নিরাপত্তা বাহিনী' গঠনের বিষয়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য নেতৃত্ব দেবে এবং কয়েকটি দেশ এতে অংশ নেবে।
তবে ইউক্রেনের মিত্রদের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, 'ইউক্রেনে কোনো সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই।' চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা একে 'অসময়োচিত' বলে মন্তব্য করেন, কারণ যুদ্ধবিরতির শর্ত এখনো নির্ধারিত হয়নি।
'নিরাপত্তা বাহিনী' নাকি সামরিক হস্তক্ষেপ?
মাখোঁ পরিষ্কার করে বলেন, এই বাহিনী শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করবে না বা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সেনাদের বিকল্প হবে না।
তিনি বলেন, সব ইউরোপীয় মিত্রই এই বাহিনীতে থাকবে না। কিছু দেশের সক্ষমতা নেই, আবার কিছু দেশ রাজনৈতিক কারণে এতে যুক্ত হতে চাইছে না।
ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দল এই বাহিনী কোথায় মোতায়েন হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এর লক্ষ্য হবে 'রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।'
মাখোঁ আরও জানান, তিনি ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মিলে ইউরোপের 'স্থিতিশীল ও টেকসই শান্তির জন্য কর্মজোট' পরিচালনা করবেন।
রাশিয়ার হুঁশিয়ারি
এদিকে, ফরাসি ও ব্রিটিশ পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, এটি 'শান্তিরক্ষা মিশনের নামে ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপের' পরিকল্পনা। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, এর ফলে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘাত শুরু হতে পারে।
ফ্রান্স ইতোমধ্যে ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ইউরো (২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলেও মস্কো কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, রুশ রাষ্ট্রীয় কৃষি ঋণদাতা রসেলখোজ ব্যাংককে আবারও আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটে যুক্ত করা।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, রাশিয়া ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এই ব্যাংককে সুইফটে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই আসে না।
সম্মেলনে নেতারা একমত হন যে, রাশিয়ার ওপর চাপ কমানো হবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, 'রাশিয়া সময়ক্ষেপণ করছে, খেলায় মেতে আছে—এটা আমাদের বোঝা উচিত।'
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, পুতিন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, ইউক্রেনের খেরসন শহরে বৃহস্পতিবার রুশ হামলায় অন্তত দু'জন নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে, রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেন তাদের ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গ্যাস মজুদ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।