আয়া সোফিয়া: সাম্রাজ্যের পতনের পরও যেভাবে টিকে আছে ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা, কী এর রহস্য

আপনি ধর্মে বিশ্বাস করুন কিংবা নাই করুন, তুরস্কের আয়া সোফিয়া পরিদর্শন সত্যিই একটি আধ্যাত্মিক অনুভূতি। আবার উপাসনালয়টির অসাধারণ স্থাপত্য দর্শনার্থীদের চোখে বিশালতার একটা ভ্রম তৈরি করে। অর্থাৎ ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করলে এমনটা মনে হয় যেন জায়গাটি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে।
আয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয় ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে। তখন এটি ছিল গির্জা। ১৪৫৩ সালে প্রথমবারের মতো এটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়।
আয়া সোফিয়ার ভেতরের শিল্পকর্মগুলোকে ভিন্ন ধর্মের মধ্যে সহাবস্থানের একটি সাক্ষী বলা যেতে পারে। পৃথিবীতে এমন আর একটি মসজিদও নেই যেখানে ইসলামি ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে খ্রিস্টান সন্ন্যাসী ও বাইজেন্টাইন সম্রাটদের মোজাইক পাশাপাশি দেখা যায়। আয়া সোফিয়া এখানে ব্যতিক্রম। এর ভেতর বড় বড় বৃত্তাকার বোর্ডে মহান আল্লাহ, নবী করীম হযরত মোহাম্মদ (সা.) এবং ইসলাম ধর্মের প্রথম চার খলিফার নামের ক্যালিগ্রাফি দেখতে পাওয়া যায়।
আজকের আয়া সোফিয়া কেবল বিশ্বের একটি অসাধারণ ও অন্যতম মসজিদই নয়, বরং এর চেয়েও বেশি কিছু। এটি একটি প্রতীক, সাংস্কৃতিক চেতনা এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন।
অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনার মতো আয়া সোফিয়া নিয়েও বহু পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত। এসব কাহিনির কিছু সত্য, কিছু অতিরঞ্জিত, আবার কিছু গালগল্প।
আরও বড়, আরও ভালো
বর্তমান আয়া সোফিয়া নির্মিত হয়েছিল ষষ্ঠ শতকে। সে সময় ইস্তাম্বুলকে বলা হতো কনস্টান্টিনোপল। তখন এটি ছিল অর্থোডক্স খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের আধিপত্য কমে যাওয়ার পর বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। আধুনিক স্পেন, লিবিয়া, মিশর এবং তুরস্ক পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার বড় একটি এ সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৪৫৩ সালে ওসমানীয়রা কনস্টান্টিনোপল শহরটি দখল করে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করে।
আমরা আজ যেটিকে আয়া সোফিয়া হিসেবে দেখি, সেখানে বহু বছর আগে দুটি গির্জা ছিল। তারও আগে ছিল একটি মন্দির।
প্রথম গির্জাটি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং কনস্টান্টিনোপলে রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। এই ঘটনার মধ্যে দিয়েই বাইজেন্টাইন যুগের সূচনা হয়।

প্রথম গির্জাটির নাম ছিল 'ম্যাগনা একলাসিয়া', ল্যাটিন ভাষার এ শব্দ দুটির অর্থ 'গ্রেট চার্চ' বা মহান গির্জা। ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কনস্টানটাইনের ছেলে দ্বিতীয় কনস্টান্টিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন। পরে এটি ধ্বংস করে দেন সেন্ট জন ক্রিসস্তমের অনুসারীরা। ক্রিসস্তম ছিলেন কনস্টান্টিনোপলের সাবেক প্রধান ধর্মযাজক। তিনি কনস্টান্টিনোপল থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন।
এরপর দ্বিতীয় গির্জাটি নির্মাণ করেন সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস। ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে এটির উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে গির্জাটি আগুনে পুড়ে যায়।
এরপর তৃতীয় গির্জাটি (আজকের আয়া সোফিয়া) নির্মাণ করেন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান। তিনি ছিলেন উচ্চাভিলাষী এক সম্রাট। ৫২৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আয়া সোফিয়ার নির্মাণকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।
২০ শতকের ইতিহাসবিদ রেশাদ একরেম কোচুর লেখা 'ইস্তাম্বুল এনসাইক্লোপিডিয়া'-তে অজ্ঞাত ঐতিহাসিক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, জাস্টিনিয়ান চেয়েছিলেন তার গির্জাটি যেন জেরুজালেমের বিখ্যাত টেম্পল অব সোলোমনের [ইসলাম ধর্মের পয়গম্বর সোলাইমান (আ.)] চেয়েও বড় ও আরও বেশি অলঙ্কৃত হয়।
আয়া সোফিয়া নির্মাণের সময় জাস্টিনিয়ান তার বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরদের নির্দেশ দেন যেন তারা তাদের এলাকার প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে সবচেয়ে সুন্দর নিদর্শন এই গির্জায় ব্যবহারের জন্য পাঠান।
ধারণা করা হয়, সম্রাটের এই পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। ওই অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, যখন জাস্টিনিয়ান প্রথমবার আয়া সোফিয়ায় প্রবেশ করেন, তিনি এতটাই বিস্মিত হয়েছিলেন যে সোজা দৌড়ে বেদির কাছে যান। তাকে এই বিস্ময়কর স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ দেওয়ায় সেখানে ওপরের দিকে তাকিয়ে জাস্টিনিয়ান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেন— এবং চিৎকার করে বলেন, 'আমি তোমাকে ছাড়িয়ে গেছি, সোলোমন!'
গল্পটি চমৎকার শোনালেও ইতিহাসবিদ ও আয়া সোফিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সেদাত বর্নোভালির ভাষ্য- গল্পটি সত্য নয়।
তার মতে, অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে বর্ণিত এ কাহিনি আয়া সোফিয়া নির্মাণের প্রায় ৩০০ বছর পরে লেখা হয়েছে। সম্রাট জাস্টিনিয়ানের ইতিহাসবিদ ছিলেন প্রোকোপিয়াস। তিনি সম্রাটকে নিয়ে সিক্রেট হিস্টরি নামে সমালোচনামূলক বইও লিখেছিলেন। কিন্তু তার লেখায় এ রকম কোনো কাহিনি পাওয়া যায়নি।

ঐতিহাসিক নির্মাণব্যয়
সে সময়কার অন্যতম 'মেগাস্ট্রাকচার' ছিল আয়া সোফিয়া। এর নির্মাণব্যয় ছিল চোখ কপালে ওঠার মতো।
ইতিহাসবিদ পিটার হিদার তার দ্য ফল অব রোমান এমপায়ার, আ নিউ হিস্টরি অব রোম অ্যান্ড দ্য বারবেরিয়ান্স– গ্রন্থে লিখেছেন, রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান না-কি এটি নির্মাণের জন্য সে সময় ১৫ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড সোনা ব্যয় করেছিলেন।
১৯৪৫ সালের 'ইস্তাম্বুল এনসাইক্লোপিডিয়া' অনুযায়ী এটি ছিল ৭৫ মিলিয়ন ডলারের সমান। বর্তমান হিসাবে যা প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্নোভালি মনে করেন, জাস্টিনিয়ান হয়তো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এবং জনগণের ওপর প্রচুর কর আরোপের মাধ্যমেই এই অর্থ জোগাড় করেছিলেন।
তিনি তার হিস্টরি লংগেস্ট পোয়েম বইয়ে লিখেছেন, 'এত দ্রুত জটিল নকশা তৈরি করা আর মোটা অঙ্কের নির্মাণব্যয় মেটানো এসব আজও রহস্য।'
বর্নোভালি মনে করেন, সম্ভবত এর বাজেট ও পরিকল্পনা আগে থেকেই করা হয়েছিল। 'নিকা বিদ্রোহে' যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তারই সুযোগ নিয়ে জাস্টিনিয়ান আজকের আয়া সোফিয়ার নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন।
বর্নোভালির মতে, 'আগের আয়া সোফিয়া ধ্বংস না হলে জাস্টিনিয়ান হয়তো অন্য কোথাও নতুন একটা কিছু তৈরি করাতেনই।'
উল্লেখ্য, ৫৩২ সালের জানুয়ারিতে কনস্টান্টিনোপলে এক বিশাল দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'নিকা বিদ্রোহ' নামে পরিচিত।
যে মসজিদে দেখা যায় খ্রিস্টান চিত্রকর্মও
বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে আয়া সোফিয়া অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের জন্য কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এটি ছিল সাম্রাজ্যের শেষ প্রতীকও। কিন্তু ১৪৫৩ সালে ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ কনস্টান্টিনোপল দখল করেন। এর মধ্যে দিয়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন শুরু, যার স্থায়িত্ব ছিল ১৯২২ সাল পর্যন্ত।

ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার দাবি করার কৌশল হিসেবেই মেহমেদ আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন। তবে তিনি নামটি বদলাননি। 'আয়া সোফিয়া' নামটি খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীর নামের মতো শোনালেও গ্রিক এর অর্থ গ্রিক ভাষায় 'পবিত্র জ্ঞান'।
কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর ২১ বছর বয়সি সম্রাট মেহমেদ প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে। তার থেকেই শুরু হয় একটি ধারা। এরপর ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রত্যেক সুলতানই সিংহাসনে আরোহণের পর প্রথম জুমা আদায় করতেন আয়া সোফিয়ায়।
এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ
বিপ্লব, দখল, লুটপাট, দাঙ্গা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসবের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়া সোফিয়া। এত বছরের পুরোনো স্থাপনা হওয়া সত্ত্বেও এটি যেমন অক্ষত, তেমনই পূর্ণাঙ্গ রূপে আজও দাঁড়িয়ে আছে, যা বেশ বিরল এক ঘটনা।
আয়া সোফিয়াকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ওসমানীয় বংশ, বিশেষ করে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ।
নগর গবেষক হাসান মের্ত কায়া বলেন, 'মেহমেদ তা সৈন্যবাহিনীকে বলেছিলেন— যদি এই শহর তোমরা জয় করতে পারো, তাহলে তিন দিনের জন্য শহরটি তোমাদের। তবে আয়া সোফিয়াকে স্পর্শ করা যাবে না।'
১৯৪৫ সালের ইস্তাম্বুল এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী, যদিও ইসলামে ধর্মীয় জায়গায় মানুষের ছবি প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তবুও মেহমেদ খ্রিস্টীয় মোজাইকগুলো ঢেকে দেওয়ার আদেশ দেননি।
তবে এক শতাব্দী পর সুলতান প্রথম সুলেমান প্লাস্টার করে সেই মোজাইকগুলো ঢেকে দিয়েছিলেন। তবে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামালা পাশার (কামাল আতাতুর্ক নামে সমধিক পরিচিত) কারণে সেই মোজাইকগুলো আজ দৃশ্যমান।

উল্লেখ্য, কামাল আতাতুর্ক সেক্যুলার তুর্কি রিপাবলিক গঠনের মধ্য দিয়ে ১৯২২ সালে ওসমানী খেলাফত বিলুপ্ত করেন। তিনি আধুনিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হন এবং একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই দল ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে তুরস্ক শাসন করেছে।
১৯২৬ সালে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমে আয়া সোফিয়া ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে- এমন খবর প্রকাশের পর সরকার বড় পরিসরে এটির সংস্কার করে।
১৯৩০-এর দশকে কিছুদিনের জন্য আয়া সোফিয়ায় জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। এরপর ১৯৩৫ সালে কামাল আতাতুর্ক এক ডিক্রি জারির মাধ্যমে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করেন। তিনি প্লাস্টার করে ঢেকে দেওয়া সেই মোজাইকগুলোও উন্মুক্ত করার নির্দেশ দেন।
মসজিদ থেকে জাদুঘর… আবার মসজিদ
২০২০ সালে আয়া সোফিয়াকে আবারও মসজিদে রূপান্তর করা হয়। ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই স্থাপনা নিয়ে এমন সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ইউনেস্কো, খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপসহ অনেকেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে তুরস্কে এ নিয়ে তেমন বড় কোনো বিরোধিতা দেখা যায়নি।
২০২৪ সাল থেকে আয়া সোফিয়ার দ্বিতীয় তলা জাদুঘর হিসেবে চালু রয়েছে। দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে গ্যালারিতে প্রবেশ করতে পারেন এবং ওপর থেকে নিচের নামাজের স্থানটি দেখতে পারেন।

বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সেসব মোজাইক ও ছবিগুলো পরিদর্শনের সময় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং নামাজের সময় বিশেষ আলো ব্যবহার করে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়। এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটিতে মসজিদ থাকবে, না জাদুঘর—তা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে।
অনেকে মনে করেন, একে জাদুঘরেই ফিরিয়ে আনা উচিত, যেন ধর্মীয় কাজে আর ব্যবহৃত না হয়।
তবে নগর গবেষক হাসান মের্ত কায়ার মতো কেউ কেউ আংশিকভাবে ধর্মীয় ব্যবহারের পক্ষে। তিনি বলেন, 'আয়া সোফিয়ায় শুধু জুমার নামাজ, ঈদের নামাজ এবং রমজানে তারাবিহ আদায় করা যেতে পারে। যেন সীমিত মানুষ প্রবেশ করে। এই নামাজগুলো মুসলমানদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সংরক্ষণের এত চেষ্টার পরও ইতিহাসে এক সময় আয়া সোফিয়া পুরোপুরি ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে গিয়েছিল। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ, ফরাসি, ইতালিয়ান ও গ্রিক বাহিনী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইস্তাম্বুল দখল করে। তখন ওসমানীয়রা হেরে যায় জার্মানি নেতৃত্বাধীন পক্ষের সঙ্গে। সে সময় তুরস্কের এক রাজনীতিক তেভফিক পাশা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যদি বিজয়ী শক্তি আয়া সোফিয়াকে আবার গির্জা বানাতে চায়, তাহলে তিনি পুরো স্থাপনাটি গুঁড়িয়ে দেবেন।
আয়া সোফিয়াকে ঘিরে পৌরাণিক গল্প
আয়া সোফিয়াকে ঘিরে কিছু গল্প নিছক কল্পনা। তবু এসব গল্পই কখনো কখনো বাস্তবের চেয়েও মানুষের মনে বেশি প্রভাব ফেলে।
এমনই একটি গল্প বেশ প্রচলিত। ৫০০ শতকের শেষদিকে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে আয়া সোফিয়ার গম্বুজে বড়সড় ফাটল সৃষ্টি হয়। তখন সম্রাট জাস্টিনিয়ানকে তার উপদেষ্টা ও ধর্মযাজকেরা বলেছিলেন, আরবে জন্ম নিয়েছেন একজন নবী, ঈশ্বরের শেষ দূত। এ বিষয়ে তারা ভবিষ্যদ্বাণী ও নক্ষত্র দেখার মাধ্যমে খোঁজ পেয়েছেন।
গম্বুজটি মেরামতের জন্য চাই বিশেষ সংমিশ্রণ। আর যা তৈরি হতে হবে নবজাতক নবীর মুখের লালা, জমজম কূপের পানি ও মক্কার মাটি দিয়ে! গল্প অনুযায়ী, সেই 'পবিত্র মিশ্রণ' দিয়েই ফাটল ঠিক করা হয়।

নগর গবেষক হাসান মের্ত কায়া বলেন, 'এসব পৌরাণিক গল্প আয়া সোফিয়াকে মানুষের মনে গেঁথে দেয়। এটা হয়ে ওঠে তদের মসজিদ, তাদের উপাসনালয়।'
আজ আয়া সোফিয়া যেন রাজনীতি, বিশ্বাস এবং ইতিহাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রতীক। তুর্কি ইতিহাসবিদ এ চাগরি বাসকুর্ত বলেন, 'সাধারণ মানুষের চোখে আয়া সোফিয়া বরাবরই বিজয়ের প্রতীক।'এটি আজও টিকে আছে বহু তুর্কি মুসলমান নাগরিকের মনে।
বর্তমানে আয়া সোফিয়া দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। ২০২৪ সাল থেকে দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটব্যবস্থা চালু করা হয়। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ২৫ ইউরো।
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা