ইস্তাম্বুলে মুখোমুখি আলোচনার অপেক্ষায় জেলেনস্কি, কিন্তু পুতিন যাবেন কি?

এ সপ্তাহে তুরস্ক সফরে যাবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সেখানে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করবেন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধ বন্ধ ও সমাধান খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানান, তিনি বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় পৌঁছাবেন এবং সেখানেই আলোচনার প্রস্তুতি নেবেন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুজনেই পুতিনের পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করবেন। পরে জেলেনস্কি ও এরদোয়ান একসঙ্গে ইস্তাম্বুলে যাবেন।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জেলেনস্কি বলেন, "রাশিয়ার সবকিছুই পুতিনের উপর নির্ভরশীল, তাই যুদ্ধের সমাপ্তি এবং যুদ্ধবিরতির জন্য একমাত্র উপায় হলো সরাসরি তার সঙ্গে আলোচনা।" এদিকে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে জেলেনস্কি বলেন, যদি পুতিন না আসেন, তাহলে স্পষ্টভাবে ধরে নিতে হবে যে রুশ প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শেষ করতে চান না।
তবে আলোচনায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো নিশ্চিত করেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মুখোমুখি আলোচনার আহ্বানে মস্কো সরাসরি কোনো সাড়া দেয়নি।
মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আবারও সাংবাদিকদের বলেন, পুতিন ইস্তাম্বুলে যাবেন কি না, কিংবা রাশিয়ার পক্ষে কে আলোচনায় অংশ নেবেন—সেই বিষয়ে তিনি কিছু বলবেন না। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট যখন মনে করবেন সময় হয়েছে, তখনই আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা দেব।'
রাশিয়া এখন পর্যন্ত শুধু এটুকুই বলেছে—তারা কোনো শর্ত ছাড়াই ইস্তাম্বুলে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে।
যদি জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার বৈঠক হয়, তাহলে এটি হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর তাদের প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। সেই সময়ের পর থেকে অনেক কিছুই বদলে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে দুই পক্ষকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিজেও আলোচনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সোমবার ট্রাম্প বলেন, তিনি 'আসলে উড়ে গিয়ে' ইস্তাম্বুলে আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন। জেলেনস্কি এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও মস্কোর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জেলেনস্কি বলেন, 'তুরস্কে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, তাহলে ইউক্রেনের সবাই কৃতজ্ঞ থাকবে। এটি একটি সঠিক উদ্যোগ। আমরা অনেক কিছু পরিবর্তন করতে পারি।'
রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে এর আগে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছিল, যা পুতিন প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি তাতে রাজি হন, তবে শর্ত দেন—পুতিনকে অবশ্যই সরাসরি আলোচনায় উপস্থিত থাকতে হবে। মঙ্গলবার জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক আবারও স্পষ্ট করে বলেন, জেলেনস্কি কেবল পুতিনের সঙ্গেই বৈঠকে বসবেন, রুশ প্রতিনিধিদলের অন্য কারো সঙ্গে নয়।
এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স মঙ্গলবার আবারও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমরা পুতিনের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছি।'
মেৎর্স আরও বলেন, 'আমরা একমত যে, এই সপ্তাহে যদি বাস্তব কোনো অগ্রগতি না হয়, তাহলে ইউরোপীয় পর্যায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে আমরা উদ্যোগ নেব। আমাদের লক্ষ্য হবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেমন জ্বালানি ও আর্থিক বাজার।'
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিথ মেৎর্স জেলেনস্কির ইস্তাম্বুল সফরের প্রস্তুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, 'এখন আলোচনার এ প্রস্তাব গ্রহণ করা ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার দায়িত্ব পুতিনের। বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।'
এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, মস্কো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে কয়েক দিনের মধ্যেই এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হবে আর্থিক পরিষেবা খাত ও জ্বালানি খাত—বিশেষ করে তেল ও গ্যাস।
ম্যাখোঁর এ মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ড যৌথভাবে রাশিয়াকে সতর্ক করে জানিয়েছে, সোমবারের মধ্যে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে মস্কোর ওপর আরও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাশিয়া এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংঘর্ষ চলছে
এদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতভর রাশিয়া যে ১০টি ড্রোন ছুড়েছিল, তার সবগুলোই তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এটি সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে কম সংখ্যক ড্রোন হামলা।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সাধারণ সদর দপ্তর জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা পর্যন্ত ফ্রন্টলাইনে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ১৩৩টি সংঘর্ষ হয়েছে। অথচ এই সময়েই ইউরোপীয় শক্তিগুলোর প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
ইউক্রেনের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ওলেক্সান্ডার সিরস্কির বরাত দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সবচেয়ে তীব্র লড়াই এখনো চলছে দোনেৎস্ক অঞ্চলে—যা পূর্ব ফ্রন্টের কেন্দ্রবিন্দু—এবং রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে। ৯ মাস আগে ইউক্রেনীয় বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে এই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল।
অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বেলগোরোদ অঞ্চলে হামলার অভিযোগ এনেছে। মঙ্গলবার বেলগোরোদের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনীয় বাহিনী এই অঞ্চলে ৬৫টি ড্রোন ও ১০০টির বেশি গোলাবারুদ ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে।