পাকিস্তানে ট্রেনে হামলা: ১০৪ জিম্মি উদ্ধার, সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৬ সদস্য নিহত

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। যাত্রীদের অনেককে সেখানে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে সামরিক সূত্র মঙ্গলবার বিবিসিকে জানিয়েছে।
হামলার দায় স্বীকার করে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) জানিয়েছে, কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস সিবি জেলায় পৌঁছালে রেল লাইনের ওপর বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি বর্ষণ করে তারা ট্রেনের ওপর হামলা চালায়। ট্রেনটি এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি তাদের।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্তত ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছে এবং ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার হওয়া ১৭ জন আহত যাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এখনও রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের কোনো কভারেজ নেই।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেলুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দিলে জিম্মিদের হত্যার হুমকি দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রেনটি 'পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটি টানেলের ঠিক আগে আটকে আছে'।
একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে, ট্রেনটিতে কোয়েটা থেকে ১০০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য ছিলেন।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষসহ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ, বিএলএকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
গোষ্ঠীটি স্বাধীনতার দাবিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। প্রায়ই পুলিশ স্টেশন, রেললাইন ও মহাসড়ককে লক্ষ্য করে অসংখ্য প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের একজন মুহাম্মাদ বিলাল বলেন, 'আমরা কীভাবে পালাতে পেরেছি তা বর্ণনা করার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। এটা ছিল আতঙ্কজনক।'
আরেক যাত্রী আল্লাহদিত্তা জানান, হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি স্মরণ করেন বলেন, হামলাকারীরা ট্রেনে আক্রমণ চালালে যাত্রীরা আতঙ্কে সিটের নিচে লুকিয়ে পড়েছিল।
এর আগে কোয়েটার স্থানীয় রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ট্রেনের ৮০ যাত্রী নিকটতম পানির রেলস্টেশনে হেঁটে পৌঁছাতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ১১ শিশু, ২৬ জন নারী ও ৪৩ জন পুরুষ।
এদিকে, যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়ার আশায় কোয়েটা রেলস্টেশনের কাউন্টারে ভিড় করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে কোয়েটা থেকে লাহোরগামী এক যাত্রীর ছেলে মুহাম্মদ আশরাফ বিবিসি উর্দুকে জানান, তিনি এখনও তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
অন্য এক আত্মীয় জানান, তিনি তার চাচাতো ভাই ও তার ছোট সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।