Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
December 19, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, DECEMBER 19, 2025
পূর্ব পাকিস্তানের শেষ ফ্লাইট ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

ইজেল

আন্দালিব রাশদী
16 December, 2025, 05:35 pm
Last modified: 16 December, 2025, 06:35 pm

Related News

  • ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘিরে উভয় সংকটে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’: গোলাম আযম ও নিজামীর ছবিতে ময়লা নিক্ষেপ
  • নিয়াজির একাত্তর ডায়েরি
  • দেশভাগের পর পাকিস্তানে ফিরছে সংস্কৃত ভাষা, রয়েছে গীতা-মহাভারত নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনাও
  • কোর্ট মার্শালে সাবেক আইএসআই প্রধানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

পূর্ব পাকিস্তানের শেষ ফ্লাইট ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

আন্দালিব রাশদী
16 December, 2025, 05:35 pm
Last modified: 16 December, 2025, 06:35 pm
ছবি: সংগৃহীত

ব্রিগেডিয়ার শের খান (অব.)-এর রচনাটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। এটি অনূদিত হলো: 

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বেলা ১টা ৫ মিনিটে পাকিস্তান  সেনাবাহিনীর এলুয়েট-৩ হেলিকপ্টার ঢাকা এয়ারপোর্টের কাছ থেকে উড়ে এয়ারফিল্ড অতিক্রম করে চলে গেল। সেখানে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের নিচ দিকটাতে ভিআইপি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখার কাজ এগিয়ে চলছে। ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল অরোরা এখানে অবতরণ করবেন। এ মাসের প্রথম দিকে তার বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেছে।                                     

মেজর মোহাম্মদ জারিফ বাঙ্গাশ হেলিকপ্টারটি স্বাভাবিক উচ্চতার নিচ দিয়ে উড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণে এবং বার্মার উত্তর প্রান্তে আকিয়াব শহরের দিকে এগোচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আছেন আরো একজন এলুয়েট পাইলট মেজর তৌহিদ উল হক, এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার মেজর ইজাজ মিনহাজ ও পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের একজন স্কোয়াড্রন লিডার আর পথে রিফুয়েলিংয়ের জন্য ১০ জেরিক্যান অতিরিক্ত জেট ফুয়েল। এ ধরনের হেলিকপ্টারের ট্যাংকে যে পরিমাণ জ্বালানি ধরে, তাতে এতদূর গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। 

বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে এবং বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী অবস্থান নেয়া ভারতীয় নৌ-বাহিনীর শনাক্তকরণ আওতা এড়িয়ে চট্টগ্রামের দক্ষিণে আরাকানের জঙ্গলে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে রিফুয়েলিং করে এবং সাড়ে ৪ ঘণ্টা আকাশপথে উড়ে হেলিকপ্টারটি সন্ধ্যার দিকে আকিয়াব অবতরণ করল। পাকিস্তানের ইতিহাসে সেই বেদনাদায়ক দিনে, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসের সেই কলঙ্কজনক দিনে, ১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে লেখা লে. জেনারেল কামাল মতিনউদ্দিনের গ্রন্থের ভাষায়, 'লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করলেন এবং পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের তিক্ততম শত্রু হাতে অর্পণ করলেন।

কিছুদিন আগে আমি জরিফকে পেয়ে গেলাম, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল।  প্রায়ই আমাদের সেই স্মরণীয় ফ্লাইটটি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতাম। আলাপের বিষয় যথেষ্ট আগ্রহসঞ্চারক এবং তা পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করা যায়। হামুদুর রহমান কমিশনের আংশিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর যেসব বিতর্ক উঠেছে, এ লেখা তার ওপর কিছু আলো ফেলবে, আশা করা যায় এটি নতুন কোনো বিতর্কের জন্ম দেবে না। আমাদের দীর্ঘ আলাপচারিতার সারাংশ:

'১৯৭১-এর ২৫ মার্চের সামরিক অভিযানের পর পরই এপ্রিলের প্রথম দিকে আমাকে করাচি যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো, সেখান থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হবে পূর্ব পাকিস্তানে ইস্টার্ন কমান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত এভিয়েশনে লজিস্টিক ফ্লাইটে। আমার সঙ্গে তিনজন ফিক্সড-উইং পাইলটও রয়েছেন। আমরা করাচি এয়ারপোর্টের হজ¦ টার্মিনাল থেকে পিআইএর বোয়িং ৭০৭-এ আরোহণ করলাম। আমাদের সঙ্গে খাইবার রাইফেলসের এক কোম্পানি বা কাছাকাছি সংখ্যক সদস্য। খাইবার রাইফেলসকে শক্তি জোগাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে তারাও চলেছে। আমাদের উড়োজাহাজ টেকঅফ করার পর পরই পাইলট আমাকে ককপিটে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, উড়োজাহাজে আমরা কী মাল নিয়েছি? এত ভারী হয়ে গেছে যে, রানওয়ের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কোনো রকমে উড়োজাহাজটিকে উড়াতে পেরেছেন। উড়োজাহাজ অতিরিক্ত ভারী হয়েছে; ভবিষ্যতে ওজনের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হতে বললেন। 

যা-ই হোক, কোনো রকম ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাড়া আমরা কলম্বো পৌঁছলাম (ভারতের উপর দিয়ে ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট কথিত হাইজ্যাকের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছিল)। পাইলট আমাকে আবার ককপিটে ডাকলেন। এবার জানালেন, দুটি ভারতীয় ফাইটার আমাদের বোয়িংয়ের পিছু নিয়েছিল। পাইলট তাই তাড়াতাড়ি আরো উপরে উঠে যান এবং গতি বাড়িয়ে দেন। ফাইটার দুটি পেছনে পড়ে যায়। ভারতের পূর্ব উপকূলের পাশ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের দিকে আসার সময় ভারতীয় ফাইটার বারবার বিরক্ত করতে থাকে। তার পরও আমরা নিরাপদে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম এবং আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।

'পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কোনো উড়োজাহাজ না থাকায় আমরা ফ্লাইং ক্লাবের সেসনা এবং কৃষির প্লান্ট প্রটেকশন বিভাগের বিভার উড়োজাহাজকে আমাদের মতো করে রূপান্তরিত করে নিলাম। তারপর বলতে গেলে আমাদের প্রায় সব ধরনের কাজই দেয়া হলো- যেমন কমান্ড ও সংযোগের দায়িত্ব, পর্যবেক্ষণ, শত্রুপক্ষের অবস্থান জরিপ, আর সীমান্তসংলগ্ন ভারতীয় ঘনবসতিতে গোলন্দাজ আক্রমণে সহায়তা দেয়া তো রয়েছেই। একটি স্মরণীয় গোলন্দাজ আক্রমণের ঘটনা ঘটে ফেনীতে। যদি ঠিকভাবে স্মরণ রাখতে পারি, ৩৩ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাজী নিজেই তার একটি ইউনিটের কমান্ডারকে নিয়ে আমাদের উড়োজাহাজে বসা। বিভারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন প্লান্ট প্রটেকশন বিভাগের পাইলট, আমি সেখানে কো-পাইলট এবং পর্যবেক্ষক। আমরা সেদিন প্রায় ৫ ঘণ্টা আকাশে ছিলাম। সীমান্তের ওপারে লক্ষ্যবস্তুতে গোলাগুলিও করেছি। পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা ভূমি থেকে ৫ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ছিলাম। ফ্লাইটের একপর্যায়ে মনে হলো, নিচ থেকে ছুড়ে দেয়া আগুনের হলকা উড়োজাহাজে লাগছে। কিন্তু এর কোনো বাস্তবিক প্রমাণ উড়োজাহাজে দেখা গেল না। পরে আমরা জানতে পারি, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ফিউজ এমনভাবে নির্মিত যে, সাড়ে চার হাজার ফুট দূরত্বে গিয়ে আগুন লাগিয়ে বিস্ফোরিত হবে। ফলে তা আমাদের উড়োজাহাজের নিচে বিস্ফোরিত হয়েছে। কপাল ভালো সেদিন ভারতীয়রা আমাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের ফাইটার নিয়োজিত করেনি।

'মে মাসের প্রথম দিকে এলুয়েট-৩ হেলিকপ্টার চালনার কনভার্শন প্রশিক্ষণের জন্য রাওয়ালপিন্ডির কাছে ধামাইল ক্যাম্পে রিপোর্ট করি। অক্টোবরের ১ তারিখে আমাকে আবার পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তত দিনে পূর্ণশক্তি নিয়ে আর্মি এভিয়েশন স্কোয়াড এসে যোগ দিয়েছে। তখন ইস্টার্ন কমান্ডের অধীন ছয়টি এমআই ৮ হেলিকপ্টার এবং তিনটি এলুয়েট হেলিকপ্টার সক্রিয় রয়েছে। প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার ক'মাস আগে থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন আন্তর্জাতিক সীমান্ত লঙ্ঘন করছিল, তখন এভিয়েশন স্কোয়াডকে বিভিন্ন মিশনে ব্যস্ত থাকতে হয়। মুক্তিবাহিনীর দখল করা জায়গা পুনরুদ্ধার করার জন্য নিয়মিত বাহিনী ও কমান্ডোদের পৌঁছানো ছাড়াও অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে—অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ, জেনারেল নিয়াজি ও তার স্টাফদের বিভিন্ন কমান্ড এলাকা ও সদর দপ্তরে আনা-নেয়া করা।

'নিয়মিত কাজের একটি ছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গণমাধ্যমের কর্মীদের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় এজেন্টদের তৎপরতা ও সহিংসতার জায়গাগুলোয় নিয়ে যাওয়া। নোমান মাহমুদ সাগিরের মতো সিনিয়র ক্যাপ্টেনদের সঙ্গে এলুয়েট চালনা ছাড়াও আমি মাঝে মধ্যে এমআই ৮-এর কো-পাইলট হিসেবে বসতাম। তাছাড়া যখন ককপিট ক্রুর সংকট দেখা দিত, তখন তো বসতেই হতো। নভেম্বরে ঈদের দিন জেনারেল নিয়াজি হেলিকপ্টারে বিভিন্ন হেডকোয়ার্টার্সে গেলেন এবং সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাত ও শুভেচ্ছা  বিনিময় করলেন।

সেদিন আমরা জানতে পারি, পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একটি উড়োজাহাজ ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়লে তা গুলিবিদ্ধ হয়ে ভূপাতিত হয়। তারা পাইলটকে ছেড়ে দিয়েছে। যদি ঠিকভাবে স্মরণ করতে পারি অন্য একটি ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজ পিকিউ মেহেদি চালিয়ে ঢাকায় ফিরে আসতে সক্ষম হন। মেহেদি ক'দিন আগে পাকিস্তান বিমান বাহিনীপ্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। তত দিনে বৈরিতা অনেক দূর গড়িয়েছে, মুক্তিবাহিনী অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সেক্টরে মোতায়েন আমাদের বাহিনী আসন্ন ভারতীয় আক্রমণের মুখোমুখি হয়ে আছে, তা সত্যিই অতি আসন্ন। মুক্তিদের তৎপরতার কারণে সড়ক ও নদীপথের যানবাহনে চলাচল ঝুঁকিবহুল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে কারণে হেলিকপ্টার এবং ক্রুদের ওপর সার্বক্ষণিক চাপ পড়ছে।

'আমাদের একটি অন্যতম মিশন আহত ও নিহতদের সরিয়ে নিয়ে আসা, প্রায়ই তা করতে হয়েছে সীমান্তের ওপার থেকে আমাদের সৈন্যবেষ্টিত লক্ষ্যগুলোয় গোলন্দাজ আক্রমণের কারণে। আমার জন্য সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মিশনটি ছিল আমার নিজের ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা; আমি ৪ বেঙ্গল রেজিমেন্টে আমার চাকরি জীবনের প্রথম চার বছর কাটিয়েছি। এখান থেকেই কমিশন লাভ করেছি কিন্তু ভৈরব মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করতে আমাদের এ লড়াই করতে হয়েছে। আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের ইএমই রক্ষণাবেক্ষণ ক্রুরা তাদের সার্বক্ষণিক ব্যস্ততার মধ্যেও স্মরণ রাখার মতো সেবা দিয়ে হেলিকপ্টারগুলোকে চালু রেখেছেন। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের সরঞ্জাম ও রক্ষণাবেক্ষণ ঘাঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরও তারা এ কাজটি করেছেন। ব্যাপারটি একটু লঘু হাস্যকর মনে হতে পারে। আমাদের আরেকটি মিশন লুট হয়ে যাওয়া সরকারি তোষাখানা অর্থ পুনরায় সরবরাহ করা। মাসে যাদের বেতন সামান্য কয়েকশ টাকা, তাদের হাত দিয়ে হেলিকপ্টারে কোটি টাকা পাঠানো জিহ্বায় পানি আসার অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।

'ডিসেম্বরে যুদ্ধ বাধতেই হেলিকপ্টারগুলো ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বিভিন্ন জায়গায় রাখা হলো। ভারতীয়রা একেবারে শুরুতেই ঢাকা এয়ারফিল্ডে বোমাবর্ষণ করে এটিকে অকেজো করে দেয়। পাকিস্তান এয়ারফোর্সের কোনো জাহাজ আর উড়তে পারল না। তার পরই পূর্ব পাকিস্তানের আকাশ ভারতীয়দের দখলে চলে গেল। আমাদের আকাশপথে অধিকাংশ চলাচল কেবল রাতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ল। ওড়াওড়ির যত কাজ, আমাদের স্কোয়াড্রন তা রাতেই প্রায় অন্ধের মতো চালিয়ে যেতে লাগল। কারণ উড়োজাহাজের আলো দেখা গেলে ভূমি থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে যাবে। সৌভাগ্যবশতঃ পূর্ব পাকিস্তানে আমার চার বছরের চাকরি খুব কাজে লেগেছে। এখানকার ভূপ্রকৃতি আমার ভালো চেনা ছিল। আত্মসমর্পণের কয়েক দিন আগে ইস্টার্ন কমান্ডের এক কর্মকর্তাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কয়েকটি অধঃস্তন হেডকোয়ার্টার্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। আমরা যেখানেই অবতরণ করছি, তিনি স্থানীয় কমান্ডারের কাছে একটি খাম হস্তান্তর করছেন— খাম খুলে পত্রগ্রাহকের যে অভিব্যক্তি, তা ক্রোধের। খামের ভেতর আসন্ন আত্মসমর্পণের কথা লেখা আছে। 

'সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম গ্যারিসনের কমান্ডিং অফিসার। ভারতীয় নৌ-বাহিনী অবরোধ সৃষ্টি করে গোড়াতেই চট্টগ্রামকে দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তিনি আমাদের মুখের ওপর আদেশটি ছুড়ে মারলেন। বললেন, এ ধরনের অপমানজনক আত্মসমর্পণের আদেশ তিনি মানতে রাজি নন। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে তার ট্রুপসের আদৌ কোনো রক্তপাতও ঘটেনি সেখানে কেনো আত্মসমর্পন। যাক, তার পরও তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি কমিশনার ও পুলিশের ডিআইজিকে আমার হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম ত্যাগ করতে দিলেন।

১৫ ডিসেম্বর স্কোয়াড কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লিয়াকত আসরার বুখারি অফিসারদের নিয়ে একটি সম্মেলন করলেন এবং বললেন, ইস্টার্ন কমান্ড তাকে নির্দেশ দিয়েছে, উড্ডয়ন উপযোগী সব উড়োজাহাজ সে রাতেই বার্মার আকিয়াব নিয়ে যেতে হবে, সঙ্গে যত বেশি সংখ্যক নারী ও শিশু। একটি এলুয়েট এবং এর ক্রুদের যদি জেনারেল নিয়াজির প্রয়োজন হয়, সেজন্য রয়ে যেতে হলো। যেহেতু আমি ও তৌহিদুল হক ব্যাচেলর, ক্রু হিসেবে আমাদেরই নির্বাচন করা হলো।

(জেনারেল মতিনউদ্দিনের কথায়) '১৫ ডিসেম্বর (১৯৭১) জেনারেল নিয়াজি (ফিল্ড মার্শাল) মানেকশর কাছে সিগনাল পাঠিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে শর্তযুক্ত অস্ত্রবিরতি প্রস্তাব মেনে নিলেন। জেনারেলের চার আর্মি এভিয়েশন স্কোয়াডের কমান্ডিং অফিসার লিয়াকত আসরার বুখারি প্রস্তুত, অনুমতি পেলেই রাতের অন্ধকারে তার দলবল ও হেলিকপ্টার নিয়ে বার্মা চলে যাবেন। ভারতীয় বিমান বাহিনী তুলনামূলক অধিক শক্তি ও আকার বিবেচনা করে রিয়ার অ্যাডমিরাল শরিফ মত দিলেন, লিয়াকতকে একটা সুযোগ দেয়া যায়। উড়োজাহাজ যেন শত্রুর হাতে গিয়ে না পড়ে, সেজন্য লিয়াকতকে বাধা দেয়া ঠিক হবে না। জেনারেল নিয়াজি রাজি হলেন এবং লিয়াকতকে আদেশ দিলেন, আহত মেজর জেনারেল রহিমকে সঙ্গে নিয়ে যাক, মেজর জেনারেল রহিমের সঙ্গে ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও থাকবে। তিনি আরো বললেন, আহত জেনারেলের সঙ্গে নার্সও নিতে হবে। সে রাতে সবাই চাইছেন সপরিবারে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাবেন, তাতে সম্পূর্ণ অরাজকতার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি পাইলটদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, ঠেলাঠেলি চলতে থাকে। হেলিকপ্টারের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ ওজনের মানুষের ঠাসাঠাসি চলতে থাকে। জেনারেল মতিন বললেন, সে রাতে ১৩৯ জন নারী ও শিশুকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে হেলিকপ্টাওে, অনুমোদিত সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। হেলিকপ্টারের টেক অফ পয়েন্টে কোনো নার্সের দেখা মিলল না। ভোরের আগে পূর্ব পাকিস্তানের আকাশসীমা পেরোতে হলে ঢাকা ছেড়ে যেতে আর নষ্ট করার মতো সময় নেই। 

১৬ ডিসেম্বর ভোর ৩টার দিকে চারটি এমআই ৮ এবং দুটি এলুয়েট দক্ষিণমুখী হয়ে উড়ে গেল। আমাকে জানানো হলো, চট্টগ্রামে 'কিন্ডার' রাডার এখনো ঢাকায় কাজ করছে। পাকিস্তান এয়ারফোর্সের লোকজন তা কিছু সময় সচল রাখার পর ধ্বংস করে দেয়। এয়ারফিল্ডে অবস্থানরত এফ-৮৬ জেট শত্রুর হাতে পড়া এড়াতে তারা এক কাজটি করে। পরদিন সকালে আমাকে বিস্মিত করে মেজর সগির ও মাহমুদ আনোয়ার স্কোয়াড্রন কমান্ডপোস্টে এসে হাজির, এটা আমি চালাচ্ছি। তাদের তো অন্যান্য উড়োজাহাজের সঙ্গে আগেই আকিয়াব চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের এলুয়েট স্টার্ট না নেয়ায় তারা যেতে সক্ষম হয়নি। তারা আমাকে অনেক তোষামোদ করে বোঝাতে চেষ্টা করল, আমি যেন ইস্টার্ন কমান্ডকে রাজি করিয়ে দিনের আলোতেই তাদের নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করি। 'হেড কোয়ার্টার্সের অবস্থা খুবই গোলমেলে, আত্মসমর্পণের সময় ঘনিয়ে আসছে। আমার যদ্দুর মনে হয়, তিনি এয়ার কমডোর ইনাম, আমরা কেন যাইনি সেজন্য বকাঝকা করলেন এবং হেলিকপ্টার দ্রুত স্থান ত্যাগ করার পরামর্শ দিলেন। পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একজন অফিসারকে আমাদের সঙ্গে নিতে বললেন। কারণ এখানে তার আর কোনো কাজ নেই।

হেলিকপ্টারগুলো যেখানে পার্ক করা, আমরা গাড়ি চালিয়ে সেখানে এলাম।  মেজর সগির আমার চেয়ে খানিকটা দূরে ছিলেন। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আমাদের আকিয়াবে দেখা হয়। আমরা যার যার মতো করে বোঝা নিয়েছি। সঙ্গে বাড়তি জ্বালানি। কারণ এলুয়েটের উড্ডয়নক্ষমতা অনেক কম। আকিয়াবে পৌঁছতে আরো  বেশি সময় আকাশে থাকতে হবে (এমআই ৮ বহু দূরবর্তী সফরের জন্য বাড়তি ট্যাংক সংযোজন করা আছে), আমাদের উড়োজাহাজ চালু হলো,  টেকঅফ করল, এয়ারপোর্টে যেখানে জেনারেল অরোরাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে, সেই রিসেপশন লাইনের উপর দিয়ে আমরা উড়ে গেলাম। গাছগাছালি পাশ কাটিয়ে আমরা দক্ষিণে চলেছি। চট্টগ্রাম থেকে খানিকটা দূরে থাকতেই ফুয়েল ফিল্টারের সতর্কতা বাতি জ্বলে উঠল। মানে পাইপে জ্বালানি আটকে গেছে। এটা পরিষ্কার করতে হবে অথবা পাল্টাতে হবে নতুনবা কয়েক মিনিটের মধ্যে ইঞ্জিন তেলশূন্য হয়ে পড়বে। আমরা তখনো শত্রুর সীমানার ভেতর, কাজেই বেপরোয়া হয়ে আমরা পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে আরাকান অরণ্যে খানিকটা খালি জায়গা পেয়ে সেখানে ল্যান্ড করি।

মেজর ইজাজ মিনহাস ফুয়েল ফিল্টার বদলানোর আয়োজন করলেন। ফিল্টার না করেই আমরা জেরিক্যান থেকে জ্বালানি সরাসরি ট্যাংকে ঢাললাম। স্বাভাবিক অবস্থায় এমনটি কখনো করা হয় না। আদিবাসী উপজাতীয়দের কেউ কেউ কী হচ্ছে, দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি দিলে আমরা তাদের দিকে সাব-মেশিনগান তাক করে রইলাম। আমরা যখন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, ইঞ্জিন স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করার পরও ইঞ্জিনের আলো জ্বলল না। আরো কয়েকটি প্রচেষ্টা একইভাবে ব্যর্থ হলো। ইঞ্জিনে জ্বালানি প্রবেশ করছে না। ততক্ষণে ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে এসেছে। ঢাকা থেকে পালিয়ে আসার পর বার্মার অরণ্যে এ এক অদ্ভুত অনুভূতি, গন্তব্য থেকে শতমাইল দূরে। ব্যাটারিকে স্বয়ংক্রিয় শক্তি অর্জনের জন্য কিছুটা সময় দেয়া হলো। আমাদের ঠোঁটে প্রার্থনা, হৃদয় চলে এসেছে মুখে। শেষে চেষ্টা হিসেবে আমি আরেকবার ইঞ্জিন ক্র্যাংক করলাম। ধীরে, অলসভাবে, মনে হলো অনন্তকাল পর শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনে আলো জ্বলল, গতিসঞ্চার হলো, আমরা উড়তে সক্ষম হলাম। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, আমরা আকিয়াব অবতরণ করতে সমর্থ হলাম।.

'বার্মার কর্তৃপক্ষ আমাদের অন্তরীণ করল, আগে যারা পৌঁছেছে সে ক্রু ও যাত্রীদের কাছে তারা জানতে চাইছে বিনা অনুমতিতে আমরা কেন বার্মার আকাশপথে প্রবেশ করলাম। সব ক্রু ও হেলিকপ্টার বেসামরিক আমাদের এ কথা তারা গ্রহণ করল না। অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সত্যিকার পরিচয় বেরিয়ে এলো যদিও আমরা বেসামরিক পোশাকে ছিলাম এবং উড়োজাহাজের সামরিক চিহ্নও মুছে ফেলেছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের আগে যারা এসেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের রেঙ্গুন পাঠিয়ে দেয়া হলো, কাউকে উড়োজাহাজে, কাউকে সড়কপথে। তার পর পুনর্বাসনের জন্য পাকিস্তান দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করা হলো। কয়েক সপ্তাহ পর আমরা সবাই কলম্বো হয়ে করাচি পৌঁছলাম। সেখানে আর্মি এভিয়েশন ঘাঁটি ধামাইলের (পরে কাসিম ঘাঁটি) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জব্বার আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন।

কয়েক সপ্তাহ পর হেলিকপ্টারগুলো ব্যাংকক নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানি ক্রুদের অনুমতি দেয়া হয়, ব্যাংকক থেকে জাহাজে এগুলো করাচি আনা হলো।

Related Topics

টপ নিউজ

পাকিস্তান / মুক্তিযুদ্ধ / ১৯৭১ / ডায়েরি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    ওসমান হাদির অবস্থা সংকটাপন্ন: মৃত্যু হলে শাহবাগে জড়ো হওয়ার ডাক ইনকিলাব মঞ্চের
  • আব্দুল হান্নান। ছবি: সংগৃহীত
    হাদি হত্যাচেষ্টা মামলা: পুলিশের গাফিলতিতে কি ভুল ব্যক্তি রিমান্ডে?
  • ফাইল ছবি: টিবিএস
    ফাঁকি কমাতে এলপিজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর
  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    জিগাতলায় ছাত্রীনিবাস থেকে এনসিপি নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) সংযোগ সড়কটি খুলে দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
    যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো মিরপুর ৬০ ফুটের সংযোগ সড়ক
  • ছবি: টিবিএস
    চলতি অর্থবছরের মধ্যে রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য: গভর্নর

Related News

  • ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘিরে উভয় সংকটে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘৃণাস্তম্ভ’: গোলাম আযম ও নিজামীর ছবিতে ময়লা নিক্ষেপ
  • নিয়াজির একাত্তর ডায়েরি
  • দেশভাগের পর পাকিস্তানে ফিরছে সংস্কৃত ভাষা, রয়েছে গীতা-মহাভারত নিয়ে গবেষণার পরিকল্পনাও
  • কোর্ট মার্শালে সাবেক আইএসআই প্রধানের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

ওসমান হাদির অবস্থা সংকটাপন্ন: মৃত্যু হলে শাহবাগে জড়ো হওয়ার ডাক ইনকিলাব মঞ্চের

2
আব্দুল হান্নান। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলা: পুলিশের গাফিলতিতে কি ভুল ব্যক্তি রিমান্ডে?

3
ফাইল ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

ফাঁকি কমাতে এলপিজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর

4
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

জিগাতলায় ছাত্রীনিবাস থেকে এনসিপি নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

5
রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) সংযোগ সড়কটি খুলে দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো মিরপুর ৬০ ফুটের সংযোগ সড়ক

6
ছবি: টিবিএস
অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরের মধ্যে রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য: গভর্নর

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net