চট্টগ্রামের দুই আসনে বিএনপির প্রার্থী আসলাম, নোমান; আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১১’তে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের দুটি সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও আলোচিত নেতা আসলাম চৌধুরীকে এবং চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে দলটির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে জাতীয়াতাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত দলীয় প্রত্যায়নপত্র (মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য) প্রদান করা হয় চট্টগ্রামের এই দুই নেতাকে।
গত ৪ ডিসেম্বর দলটি ঘোষিত প্রথম দফায় চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয় উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. সালাউদ্দিনকে। এরপর থেকে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। সালাউদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও শেষপর্যন্ত আসলাম চৌধুরীই দলীয় প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন ছিল। শেষপর্যন্ত তেমন সিদ্ধান্তই নিল দলের হাইকম্যান্ড।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, হালিশহর ও খুলশী) আসনে প্রথমে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। এই আসন থেকে এর আগেও নির্বাচন করেছিলেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। তবে এবার এই আসন থেকে তার ছেলে সাঈদ আল নোমান মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। শেষপর্যন্ত চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নোমানের ভাগ্যে দলীয় প্রতীক মিলল। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি এই আসন নিয়ে কাজ করছিলেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করার পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে পানি, খাবার বিতরণের মতো জনহিতকর কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি দলীয় প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী সাঈদ আল নোমান টিবিএসকে বলেন, "দল আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, তা আমার জন্য এক অনন্য সম্মান এবং একইসঙ্গে দায়িত্ব। ইনশাআল্লাহ, সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাব। চট্টগ্রামের আপামর জনতা বিশেষ করে চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রতিটি মানুষ সুখ-দুঃখে পাশে থেকে, তাদের ন্যায্য অধিকার ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি অবিচলভাবে কাজ করে যাব। ইনশাআল্লাহ, ধানের শীষের বিজয়ের মাধ্যমে এ আসনে গণমানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।"
এদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে দলীয় প্রার্থী করেছে বিএনপি। এই আসন থেকে তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। তবে এই আসনে তার ছেলে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। খসরুও চেয়েছিলেন নিজের গোছানো আসনে ছেলেকে দিয়ে তিনি নিজে চট্টগ্রাম-১০ থেকে নির্বাচন করবেন। তবে দলের এক পরিবার থেকে এক প্রার্থী নীতির কারণে বাদ পড়েন ইসরাফিল।
এ দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫টিতে প্রার্থী দিল বিএনপি। শুধু চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এই আসন থেকে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন করে আসছেন বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বিএনপি থেকে বের হয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠনের পরও তিনি জোটের অংশীদার হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন।
এই আসন থেকে তার ছেলে ওমর ফারুকের নির্বাচন করার কথা আছে। এজন্য বিএনপি শুরু থেকে এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু, গত বুধবার কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জোটের বাইরে এসে একক নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কপাল খুলতে পারে।
প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুবের রহমান শামীম। তবে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন; চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর; চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ নেতা মোস্তফা কামাল পাশা; চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন; চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী; চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী; চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের চট্টগ্রাম নগর ইউনিটের আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ; চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালি) আসনে দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান; চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হক; চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম; চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন; চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলামের ছেলে এবং দলের দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলামকে প্রার্থী করা হয়েছে।
