শাহবাগের বদলে বাংলামোটরে অনুষ্ঠিত এনসিপির কর্মসূচি, অহিংস আন্দোলনের শপথ
সহিংসতা ও নাশকতার (স্যাবোটাজ) আশঙ্কায় গতকাল (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিরত থেকেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এর পরিবর্তে সন্ধ্যায় দলের কার্যালয়ের সামনে বাংলামোটরে কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দেশজুড়ে অহিংস আন্দোলন ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারে দলীয় নেতাকর্মীদের শপথ পাঠ করান।
এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় তিনি বলেন, 'আমরা শপথ করি, আমরা অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাবো। একইসাথে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করবেন সারা বাংলাদেশে। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে নেবেন। বাংলাদেশে অহিংস কর্মসূচি চলবে। যদি এনসিপির নামে কোনো গোষ্ঠী সহিংসতা উস্কে দেয়, জ্বালাও পোড়াও করে—তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে বলবো তাদেরকে ধরে পুলিশে দিন।'
এদিকে গতকাল বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবিন গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলোর মধ্যে আরও বেশি ঐক্যের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
তিনি লেখেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে না, বরং গণতন্ত্রকামী জনগণের উচিত সরকারকে অধীনে নেয়া, নিয়ে আগামী নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে নিশ্চিত করতে হবে। তারেক রহমান সাহেবের আসা নির্ধারিত সময়ে নিশ্চিত করতে হবে।'
'বিএনপিসহ প্রত্যেকটা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলকে আরো জোরালো আওয়াজ হতে হবে। ২০২৬ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আপনাদের প্রত্যেককে ভোট দিতে হবে। প্রত্যেককে।'
এটা এই সরকার, এই প্রশাসনের পক্ষে একা সম্ভব না। এটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা দায়িত্ব নেন। এরা কেউ ফ্যাসিস্টকে একা ফেলে নাই... আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন। সাধারণ মানুষ যারা জুলাই সফল করে বাড়ি ফিরে গেছেন, তারা ফিরে আসেন আরেকবার,' উল্লেখ করেন ফেসবুক পোস্টে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার জুমার নামাজের পর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
তবে শুক্রবার দুপুরে নাহিদ ইসলাম জানান, "গতকালের মত ভাঙচুর ও নাশকতা করার পরিকল্পনা রয়েছে জুলাইবিরোধী শক্তিগুলোর। আমরা যেকোনো প্রকার ভায়োলেন্স ও নাশকতার বিরুদ্ধে। জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে কোনো হঠকারী গ্রুপ কোথাও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ অথবা কোনো নাশকাতমূলক কার্যক্রম যাতে করতে না পারে সে ব্যাপারে ভূমিকা পালন করুন।"
নাহিদ ইসলাম বলেন, "সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকায় জুমার পরে আমাদের শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। তার পরিবর্তে বিকাল ৪টায় বাংলামোটর থেকে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজিত হবে। সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।"
এদিকে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন তৃণমূলের সকল স্তরের নেতাকর্মীকে স্থানীয় পর্যায়ে ৫ দাবিতে বিক্ষোভ আয়োজনের নির্দেশ প্রদান করেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে—শহীদ শরীফ ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার, জুলাই গণহত্যার খুনিদের ভারত থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
এছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাসী ও দোসরদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, সংবাদ মাধ্যমের ওপরে হামলার প্রতিবাদ এবং ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানায় সংগঠনটি।
আখতার হোসেন বলেন, "বিক্ষোভ চলবে, কিন্তু কোনোভাবে কোনো বিশৃঙ্খলায় জড়ানো যাবে না। আন্দোলনে নানা ধরনের হঠকারী গ্রুপের অনুপ্রবেশ করে স্যাবটাজ করার পরিকল্পনায় আছে। তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।"
"প্রতিবাদী বক্তব্য হবে, কিন্তু দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়ে এমন কোনো বিষয়ে এনগেজড হওয়া যাবে না," যোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে, বাংলামোটরের অবস্থান কর্মসূচিতে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, "ভারতকে আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত এদেশে বিপ্লবী পরিবেশ থাকবে। ভারত যদি গোয়ার্তমি করতে চায়, বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেবেনা। বাংলাদেশের মানুষ জীবন দেবে, তবুও মর্যাদার সাথে আপোস করবেনা।"
তিনি আরও বলেন, "হাদির জানাজা নিয়ে যদি কেউ রাজনীতি করতে চায়, সেটা আমাদের প্রতিহত করতে হবে। অনেকেই হাদির জানাজায় স্যাবোটাজ করার সুযোগ নিতে পারে।"
অন্যদিকে, এনসিপির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট এক বিবৃতিতে ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত ঘটনার পাশাপাশি দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে তারা অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানায়। পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জোটের শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত কাইয়ূম ও মজিবুর রহমান মঞ্জু এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, পরাজিত ও পলাতক হাসিনার খুনি-সন্ত্রাসী, ভারতীয় আগ্রাসনবাদী শক্তি এবং দেশের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দোসররা মিলেই দেশে চরম অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দেশে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের উদ্যোগ বানচাল করতে চায় এবং এর মাধ্যমে দেশে একটি অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, তাদেরই উস্কানিতে গত রাতে একাধিক পত্রিকা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কূটনীতিকের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে দেশের বরেণ্য সাংবাদিক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পক্ষশক্তি নূরুল কবিরকে নাজেহাল করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান নেতারা।
এছাড়া শরিফ ওসমান বিন হাদির এই আত্মত্যাগ যেন কোনো অপশক্তির দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের হাতিয়ার না হয়, সে বিষয়ে জুলাইয়ের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়।
