পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি অবান্তর কথা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য
১৯৭১ সালে দেশ থেকে পলায়নপর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে এমন ভাবনাকে অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।
তিনি দাবি করেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল মূলত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার এমন বক্তব্যে ক্যাম্পাসে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে আয়োজিত মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, 'যে সময় পাকিস্তানিরা দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, তারা জীবিত থাকবে নাকি মৃত থাকবে সেই ফয়সালা হয়নি সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর কথা। এটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে একটা দাসের রাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাচ্ছি না। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, তবে সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম যে কী হয়েছে।'
মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে উপ-উপাচার্য বলেন, 'রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছেন, কারা হত্যা করেছে সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি। আজ পর্যন্ত শহীদের লিস্ট তৈরি হয় নাই, রাজাকারের লিস্ট তৈরি হয় নাই। শুধু বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় প্রাথমিকভাবে এক গোষ্ঠীর ওপর চাপানো হয়, পরে ১৫-২০ বছর পর দেখা যায় প্রকৃত আসামি আরেকজন। একটা জাতিকে পদাবনত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।'
উপ-উপাচার্যের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও প্রতিনিধিরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, 'বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় চবির উপ-উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল চেয়ারে বসে এমন বক্তব্য ছাত্রসমাজ গ্রহণ করে না। বুদ্ধিজীবীদের কারা হত্যা করেছে এবং কারা সহযোগিতা করেছে তার বহু দলিল ইতিহাসে রয়ে গেছে।'
চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে 'অবান্তর' আখ্যা দেওয়া ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সরাসরি অবমাননার শামিল।'
