মহাবিশ্বের রহস্য জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠিত
রাতের আকাশের রহস্যকে আরও এক ধাপ কাছে টেনে আনতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক বিশেষ আয়োজন 'আস্ট্রোনমি টকস অ্যান্ড স্কাই অবজারভেশন ২.০'।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ মিলনায়তনে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি (সিইউআরএইচএস) এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন 'দূর বিশ্বের নাগরিক' (দূরবিন)-এর যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলা দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল বক্তৃতা, কুইজ এবং রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণের সুযোগ৷
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির সভাপতি সানজিদা সিদ্দিকা হক প্রিমা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন অইন্দ্রিলা বড়ুয়া। আয়োজনের অফিশিয়াল স্পন্সর হিসেবে ছিল বাংলাদেশ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউশন (বিইআরআই) এবং মিডিয়া পার্টনার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. কামাল উদ্দীন।
বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, 'একবিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে গবেষণার বিস্তার, পরীক্ষাগারসমূহের আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনের বিকাশ অপরিহার্য। বিজ্ঞানচর্চা কেবল পাঠ্যপুস্তকনির্ভর হলে চলবে না৷ একে হাতে-কলমে পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও নতুন ধারণা তৈরি করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাচেতনা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত সেমিনার, কর্মশালা ও গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করতে হবে।' চবি উপ-উপাচার্যের মতে, বিজ্ঞানচর্চাই একটি জাতির অগ্রগতি ও মানবকল্যাণের মূল চাবিকাঠি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী এবং একই বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব। তিনি 'বিশ্বতত্ত্ব: আধুনিক বিজ্ঞানে প্রাচীন জিজ্ঞাসা' বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, 'আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগেও বিশ্বতত্ত্ব মানবজিজ্ঞাসার প্রাচীনতম প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে ফেরে—মহাবিশ্বের উৎপত্তি, বিস্তার ও গঠন কীভাবে ঘটল এবং এই বিশাল বিস্ময়ের মাঝে মানুষের অবস্থান কোথায়। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাবিশ্ববিদ্যার আধুনিক গবেষণা বিগ ব্যাং থেকে গ্যালাক্সির বিবর্তন, ডার্ক ম্যাটার–ডার্ক এনার্জির রহস্য উন্মোচনে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। তবুও মূল প্রশ্নগুলো একই থাকে, মহাবিশ্বের শুরু কোথায়, শেষই বা আছে কিনা, আর এই বিস্তৃত পরিসরে জীবনের সম্ভাবনা কতটুকু। প্রাচীন জিজ্ঞাসার ধারাবাহিক এই অনুসন্ধানই আধুনিক বিজ্ঞানের বিশ্বতত্ত্বকে এগিয়ে নিয়ে চলছে, যার প্রতিটি উত্তর আমাদের অস্তিত্বের বোধকে আরও গভীর করে তোলে।'
আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল ধারণা, আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল ও মহাবিশ্বের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা।
সন্ধ্যার পর শুরু হয় অনুষ্ঠানের শেষ ও আকর্ষণীয় পর্ব—টেলিস্কোপে রাতের আকাশ দেখা। এসময় অংশগ্রহণকারীরা চাঁদের গর্ত, দৃশ্যমান গ্রহ এবং উজ্জ্বল তারামণ্ডল সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান।
