চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: অভিযুক্ত নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করল বিএনপি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষে উসকানিমূলক ভূমিকার অভিযোগে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে দলটি।
তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আহ্বায়ক। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত এই নেতার দলে ফেরার খবরে ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'ইতিপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হলো।'
যে কারণে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন
গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে মারধরের জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দুইদিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন এখনো অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
ঘটনার দ্বিতীয় দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনায় বসলে সেখানে উদয় কুসুম বড়ুয়া উত্তেজিত বক্তব্য দেন বলে অভিযোগ ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে তাকে শিক্ষার্থীদের 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিতে এবং স্থানীয়দের তাদের বিরুদ্ধে 'সহযোগিতা' করার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।
এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকার কারণে গত ৩১ আগস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও সকল পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ
হামলায় উসকানিদাতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা। চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি অভিযোগ করেন, বিএনপি শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপহাস করছে।
তিনি বলেন, 'বিএনপি শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলছে। আমাদের এত এত ভাই আহত হলো, কয়েকজন মারাত্মকরকম আহত হয়ে এখনও ক্লাসে ফিরতে পারেনি। এরকম সন্ত্রাসী হামলায় জনসম্মুখে উসকানি দেওয়া নেতারা বিএনপির এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যে, শিক্ষার্থীদের রক্ত বিএনপির কাছে কোনো মূল্যই রাখে না।'
রনি আরও বলেন, 'নামমাত্র বহিষ্কার করলেও এখন আবার এই উগ্র নেতাকে বিএনপি দলে টেনে নিল। এই যদি হয় বিএনপির আসল চরিত্র, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদেরকেও লাল কার্ড দেখাবে।'
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আমরা দেখতে পেয়েছি যে, বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়ার উসকানিতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা গত ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। বিএনপি তখন আইওয়াশ করার জন্য এই বহিষ্কারাদেশ দেয়। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাকে আবার বিএনপি দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিএনপির এই বহিষ্কার এবং আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার— এই দুটোই জনগণের সাথে নাটক। তারা আসলে জনগণের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ থেকে বিএনপির বিরত থাকা উচিত।'
অন্যদিকে, চাকসু এজিএস ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়ুবুর রহমান তৌফিক বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, 'বিএনপি উদয় কুসুম বড়ুয়াকে কেন বহিষ্কার করল, তা আমার জানা নাই। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে মামলা করেছিল, তার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। এতে যেই দোষী, সে সাজা পাবে।'
