অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মির্জা ফখরুল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ, কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। আমরা এটা শুনতে চাই না, বাংলাদেশের মানুষ এটা শুনতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা চায় এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির প্রয়াত নেতা হান্নান শাহের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে দেশে আমাদের একটাই কথা- আমরা গণতন্ত্র ফেরত চাই, আমরা একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট চাই এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যেতে চাই। খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকারকে শতভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে।'
প্রধান উপদেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ, নোবেলজয়ী, সারা পৃথিবীর নেতারা যাকে সম্মান করেন। আমরা তাকেই দায়িত্ব দিয়েছি, কারণ আমরা চাই তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবেন এবং এমন একটি নির্বাচনের আয়োজন করবেন যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সরকারের পক্ষ থেকে এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তার সবই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ফলে সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। কিছু রাজনৈতিক দল ও ইউটিউবভিত্তিক প্রচারণাকারীরা মিথ্যা দাবি করছে যে, বিএনপি সংস্কার মানে না। কিন্তু সত্য হলো- বিএনপিই সংস্কারের জন্মদাতা।'
তিনি বলেন, '১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের পতনের পর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং আজকের গণমাধ্যম বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে দেন। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেন- এগুলোই বিএনপির সংস্কারের ধারাবাহিকতা।'
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ''একটি দল আজ নিজেকে ইসলামের একমাত্র দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করছে। অথচ সংবিধানে প্রথম 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি-ই রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে 'আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।"
ফখরুল বলেন, 'আমরা ১৫ বছর ধরে লড়াই করছি কেবল একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে৷ আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ছয় বছর কারাবন্দি ছিলেন, তারেক রহমান ১৮ বছর ধরে নির্বাসিত, ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা এবং ১ হাজার ৭০০ জন গুম হয়েছেন- এই মূল্য আমরা গণতন্ত্রের জন্যই দিয়েছি।'
ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'ভারত সব সময় চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলতে। তিস্তা ও ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিসাব আমরা পাইনি। সীমান্তে নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়- এ রকম ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটে না।'
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'লন্ডনে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই খবর শুনে দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়েছে যে, তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার পাবে।'
শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা আর সময় নষ্ট করবেন না। ধানের শীষের পক্ষে ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়ুন। যারা বারবার বাংলাদেশকে ভুল পথে নিয়েছে, তাদের পরাজিত করুন।'
হান্নান শাহের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'একবার আমার সুযোগ হয়েছিল তার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে থাকার। তার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।'
অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হান্নান শাহের ছেলে এমপি প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম প্রমুখ।