বিদেশিদের দিয়ে নয়, চট্টগ্রাম বন্দর দেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে: আনু মুহাম্মদ

চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে না দিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, 'জাতীয় সক্ষমতা তৈরি ছাড়া কোনো দেশ স্বাধীন মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। সিঙ্গাপুরের মতো মডেল অনুসরণ করে চট্টগ্রাম বন্দরকে দক্ষভাবে গড়ে তোলা সম্ভব। তবে এই বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।'
আজ (১১ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর সেমিনার হলে আয়োজিত 'জাতীয় সক্ষমতা ও জাতীয় নিরাপত্তা—চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গ' শীর্ষক সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বন্দরের পরিচালনা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার একগুঁয়ে আচরণ করছে। প্রধান উপদেষ্টা এর বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন চট্টগ্রাম পুলিশ প্রশাসন এক মাসের জন্য বন্দর এলাকায় যেকোনো সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। দেখা যাচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের পরও বর্তমান সরকার সেই হাসিনার স্বৈরাচারী ভাষাতেই কথা বলছেন। অর্থাৎ জনগণের প্রতিবাদ বন্ধ করে সরকার এই এক মাসের মধ্যেই বন্দর নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করতে চাইছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সংবিধান সংস্কার কমিটি বিদেশের সঙ্গে যেকোনো চুক্তি করার আগে বিভিন্ন ফোরামে পর্যাপ্ত আলোচনা করার সুপারিশ করেছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার তার নিজের গঠিত কমিশনের সুপারিশই মানছে না। কোনো আলোচনা ছাড়া, এমনকি বিনা টেন্ডারে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বন্দর লিজের চুক্তি করতে যাচ্ছে।'
ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিয়ে তিনি বলেন, 'ডিপি ওয়ার্ল্ড আবুধাবির কোম্পানি হলেও বাস্তবে এটি মার্কিন স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ও সামরিক গুরুত্বের কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের ওপর নজর দিয়েছে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত একটি সম্পদ কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেওয়া চলবে না।'
তিনি বলেন, 'রামপাল, রূপপুরের মতো বড় প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গেলেও আগের সরকারের তল্পিবাহকরা বলতেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা—দেশের কোনো ক্ষতি করবেন না। তাই প্রশ্নের দরকার নেই, টেন্ডারের দরকার নেই, স্বচ্ছতার দরকার নেই। এখন মুহাম্মদ ইউনূস এলেন, তার ভাষাও একই রকম। তার তল্পিবাহকরা বলছেন, উনি আছেন, কোনো অসুবিধা হবে না।'
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা শেখ নূরুল্লাহ বাহার, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমী।
ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, 'স্বাধীনতার পর থেকেই 'আমাদের সক্ষমতা নেই বলে দেশের অর্থনীতি, কৃষি ও জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর করা হয়েছে। কৃষিতে দেশীয় বীজের পরিবর্তে বিদেশি বীজ কোম্পানির বাজার তৈরি করা হয়েছে, বাপেক্সকে পঙ্গু করে বিদেশি গ্যাস কোম্পানির হাতে সম্পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরকেও বিদেশিদের লুটপাটের ক্ষেত্র বানানোর চক্রান্ত চলছে।'
অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, 'বন্দর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিলে দেশ উন্নত হবে—এমন প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তার এক্তিয়ারবহির্ভূতভাবে বন্দর লিজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।'