ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনের নিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শন করায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করে সংগঠনটি।
বুধবার (৬ আগস্ট) এক বিবৃতির মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি।
গতকাল ৫ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের গণজাগরণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রথম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'গত বছরের এই দিনে সারা বাংলাদেশের লড়াকু শহীদদের জীবন এবং আহত সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা শপথ নিতে চেয়েছি একটি বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ গড়ার। অথচ এই দিনে দাঁড়িয়ে আমরা দেখলাম, বাংলাদেশের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির প্রাঙ্গণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মদানকে অপমান করল ইসলামি ছাত্র শিবির।'
বিবৃতিতে বলা হয়, 'একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীতে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।'
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়, 'সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নাগরিকেরা এসব ছবি প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা তার কার্যালয় সারাদিনে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পরবর্তীতে আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি যে, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম বেশ ধীর গতিতে এই ছবিগুলো অপসারণ করে।'
তারা আরও উল্লেখ করেন, 'আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিম আরও আগে ব্যবস্থা নিলে এবং গাফিলতি না করলে পরিস্থিতি এত দ্রুত উত্তেজনাকর হয়ে উঠত না।'
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা জানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যা বিতর্কের উর্ধ্বে, তা হলো এই যুদ্ধাপরাধীদের একাত্তরের গণহত্যার দায়। কারণ, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হলেই অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরে,
১. ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা কখনই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করতে হবে।
৩. দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ও ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট স্মারক ও স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।