মুরাদনগরে দুই ভাইয়ের বিরোধের জেরে মব সৃষ্টি ও নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ানো হয়: র্যাব

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে নির্যাতন করে অনলাইনে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার 'অন্যতম পরিকল্পনাকারী' শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার বুড়িচং থানার কাবিলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, ওই নারীকে 'ধর্ষণ' ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ভিডিও ছড়ানোর মূল হোতা শাহ পরান ও তার ভাই ফজর আলীর বিরোধ। ফজর আলীকে বিপদে ফেলে প্রতিশোধ নিতেই পুরো ঘটনা সাজিয়েছিলেন তার ভাই শাহ পরান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ঘটনার পনেরো দিন আগে ভুক্তভোগী নারী তার স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাহেরচর গ্রামের ফজর আলী ও তার ছোট ভাই শাহ পরান দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী নারীকে উত্যক্ত করে আসছিলেন। ঘটনার দুই মাস আগে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম্য সালিশে জনসম্মুখে বড় ভাই ফজর আলী ছোট ভাই শাহ পরানকে চড়-থাপ্পর মারেন। পরে শাহ পরান বড় ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগের সন্ধানে থাকেন। সালিশের কিছু দিন পর ভুক্তভোগী ওই নারীর মা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ঋণ নেন।
র্যাব-১১-এর অধিনায়ক বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ভুক্তভোগীর বাবা-মা সনাতন ধর্মালম্বীদের মেলা দেখতে যান। এই সুযোগে ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে রাত সাড়ে ১১টায় কৌশলে ভুক্তভোগীর শোবার ঘরে প্রবেশ করেন। এরপর রার ১১টা ৫০ মিনিটে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভুক্তভোগীর বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করা মামলার মূল হোতা শাহ পরান ও ফজর আলীর পূর্ব শত্রু আবুল কালামসহ অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান ও অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন। তারা ভুক্তভোগীকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ আরও বলেন, ঘটনার পর শাহ পরানসহ আবুল কালাম ও অন্যান্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন খবরের ভিত্তিতে শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ পরান স্বীকার করেন, পূর্ব শত্রুতার কারণে ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে তার নির্দেশনাতে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় ভুক্তভোগী ও ফজর আলীকে নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটান।
র্যাব আরও বলে, শাহ পরান মব সৃষ্টির জন্য ইমো-তে মেসেজ দিয়ে অন্যদের ডেকে আনেন।