ড্রামে খণ্ডিত মরদেহ: প্রেমের ফাঁদে পড়ে বন্ধু ও তার প্রেমিকার হাতে খুন হন আশরাফুল, বলছে র্যাব
বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার মিলে রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুলকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। ১০ লাখ টাকা আদায়ের জন্য প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করার পরিকল্পনা ছিল তাদের, যা শেষে হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
হাইকোর্ট এলাকার একটি পানির পাম্পের পাশে নীল রঙের দুটি ড্রামের ভেতর থেকে গত ১৩ নভেম্বর আশরাফুলের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণে ওই লাশের পরিচয় নিশ্চিত করে র্যাব।
র্যাব-৩ জানায়, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীর একজন শামীমা আক্তার কোহিনুরকে (৩৩) শুক্রবার কুমিল্লার লাকসাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৫ নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনি তুলে ধরে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, গত ১১ নভেম্বর রাতে ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের জন্য রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর সকাল থেকে আশরাফুলের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
এর পরদিন, ১৩ নভেম্বর, শাহবাগ থানা পুলিশ হাইকোর্ট এলাকার পানির পাম্পের পাশ থেকে দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর থেকে এক ব্যক্তির ২৬ টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার করে। পরে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে র্যাব নিশ্চিত হয়, মরদেহটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।
১০ লাখ টাকার জন্য প্রেমের ফাঁদ
র্যাব জানায়, মামলার প্রধান আসামি জরেজুল ইসলামের সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে শামীমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজুল তাকে জানায়, তার বন্ধু আশরাফুলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৭ লাখ জরেজুল এবং ৩ লাখ শামীমা পাবে বলে ঠিক হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শামীমা প্রায় এক মাস আগে থেকে আশরাফুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় আসার পর জরেজুল ও আশরাফুলের সঙ্গে শামীমা ঢাকার শনিরআখড়ার নূরপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে আশরাফুলকে মাল্টার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তিনি অচেতন হয়ে গেলে জরেজুল বাইরে থেকে শামীমা ও আশরাফুলের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে।
শামীমার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজুল তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে কসটেপ লাগিয়ে দেয়। এরপর ইয়াবা সেবন করে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাকে হত্যা করে। পাশের ঘরে লাশ রেখেই সেই রাতে তারা দুজন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, পরদিন সকালে জরেজুল বাজার থেকে একটি চাপাতি ও দুটি ড্রাম কিনে আনে। এরপর সে লাশটি ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে। দুপুরে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে ড্রামগুলো বাসা থেকে বের করা হয়। মাঝপথে সিএনজি পরিবর্তন করে তারা হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে পৌঁছায়।
সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে ভয় পেয়ে তারা ড্রাম দুটি সড়কের পাশে ফেলে একটি অটোরিকশায় করে সায়েদাবাদে পালিয়ে যায়। এরপর জরেজুল শামীমাকে কুমিল্লায় তার বাড়িতে চলে যেতে বললে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে শামীমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিরআখড়ার সেই বাসা থেকে আশরাফুলের রক্তমাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা, হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, কসটেপ এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতার কোনো বিষয় আছে কি না, তা প্রধান আসামি জরেজুলকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পরিষ্কার হবে বলে মনে করছে র্যাব।
গ্রেপ্তার শামীমা আক্তারকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হবে।
