ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে মালিকপক্ষের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ: শ্রম সচিব

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় মালিকপক্ষের চাওয়া অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন—এমনটাই জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান।
বুধবার রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন নিয়ে বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ। গত ১০ মাসে আমি তিনবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সফর করেছি। সেখানে ইউএস, ইইউসহ অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়াকে জটিল করে রেখেছে।
তিনি বলেন, বিদেশিরা অভিযোগ করছে যে, 'সরকার এই প্রক্রিয়াকে ম্যানিপুলেট [প্রভাবিত] করছে। মালিকপক্ষ যেভাবে চায়, সরকার সেভাবেই ট্রেড ইউনিয়ন অনুমোদন দিচ্ছে। এটি তাদের বড় ধরনের উদ্বেগ।'
অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতা আতিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, 'আগের মতোই অফিস আর তদবির চলছে—এমন কথা শোনা যায়। বারবার ফাইল রিফিউজ [প্রত্যাখ্যান] হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কিছু শ্রমিক ফেডারেশন রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছে, আবার কেউ পাচ্ছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'শ্রমিকদের অভিযোগ করার এমন একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত, যেখানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা সরাসরি তা দেখতে পাবেন।'
জবাবে শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন (বিএলএ) সংশোধিত হলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে, বিশেষ করে ফিজিক্যাল ভ্যারিফিকেশনসহ ইউনিয়ন গঠনের পুরো প্রক্রিয়া।
তিনি জানান, বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের পুরো কার্যক্রম এখনো অনলাইনভিত্তিক করা যায়নি। কিছু কাজ এখনো হাতে-কলমে হচ্ছে, আবার মালিকপক্ষের সব তথ্য অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াকে জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে অভিযোগ করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের বড় একটি অংশই বর্তমানে নিষ্ক্রিয়।
তবে সচিব আশ্বাস দেন, পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজ করার কাজ চলছে। এতে করে এসব অভিযোগ কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ কার্যক্রমে শ্রম মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছে জার্মানভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ডয়চে গেজেলশাফট ফ্যুর ইন্টারন্যাশনালে জুসমেনআর্বাইট (জিআইজেড)।
অনুষ্ঠানে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব ইনস্পেকশন ফর ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্টস (ডিআইএফই)-এর শ্রম বিষয়ক টোল-ফ্রি হেল্পলাইন ১৬৩৫৭-এর উন্নত সংস্করণের উদ্বোধন করা হয়। এই নম্বরে ২৪ ঘণ্টা বিনা খরচে শ্রমিকেরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ জন্য একটি ডেডিকেটেড প্রযুক্তি-ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতা, ডিআইএফই ও শ্রম অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জিআইজেড-এর বাংলাদেশ প্রকল্প পরিচালক ড. সিলভিয়া পপও বক্তব্য রাখেন।