ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ন্যূনতম ৫০ শ্রমিকের শর্ত দিতে যাচ্ছে সরকার

মাত্র ২০ জন শ্রমিকের সমর্থন পেলেই কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
নতুন নিয়মে বলা হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য ন্যূনতম শ্রমিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে কারখানার আকার অনুযায়ী। একই সঙ্গে একটি কারখানায় সর্বোচ্চ ইউনিয়নের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করা হয়েছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইপার্টাইট কনসালটেটিভ কমিটির বৈঠকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে নতুন শর্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর ভিত্তিতে শ্রম আইন সংশোধন করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, যেসব কারখানায় ন্যূনতম ৫০ এবং সর্বোচ্চ ৩০০ শ্রমিক রয়েছে, সেখানে ইউনিয়ন গঠনে ৫০ জনের সমর্থন লাগবে।
৩০১ থেকে ১,০০০ শ্রমিকের কারখানায় ১০০ জন; ১,০০১ থেকে ৩,০০০ শ্রমিকের কারখানায় ৩০০ জন এবং ৩,০০০-এর বেশি শ্রমিকের কারখানায় ইউনিয়ন গঠনে অন্তত ৪০০ শ্রমিকের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, "বিস্তর আলোচনার পর এ সিদ্ধান্তে সব পক্ষ একমত হয়েছেন। এর ভিত্তিতে শিগগিরই বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করা হবে।
তবে ৫০ জনের কম শ্রমিক রয়েছে এমন কারখানার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই কর্মকর্তা জানান, "শ্রম আইন সংশোধনের পর এ বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করা হবে।"
এর আগে সরকার একক সিদ্ধান্তে জানিয়েছিল, ২০ শ্রমিকের সমর্থন পেলেই যেকোনো কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে এবং একটি কারখানায় সর্বোচ্চ পাঁচটি ইউনিয়ন করা যাবে। মালিকপক্ষ সে সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের মতে, "মাত্র ২০ শ্রমিকের সুযোগ দিলে অযৌক্তিক শ্রমচর্চা (আনফেয়ার লেবার প্র্যাকটিস) বাড়বে এবং শিল্প বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।"
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, "কারখানার আকার অনুযায়ী শ্রমিকসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠনের শর্ত ঠিক করে দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। তবে একটি কারখানায় পাঁচটি ইউনিয়ন হলে দলাদলি বাড়বে, যা উৎপাদন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।"
এদিকে, ৫০ জনের নিচে শ্রমিক রয়েছে এমন কারখানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিপুল শ্রমিকের অধিকার অনিশ্চয়তায় পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের শীর্ষ এক শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞ—যিনি আইএলওতেও দায়িত্ব পালন করেছেন—নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "৫০ জনের নিচে শ্রমিক আছেন এমন কারখানার সংখ্যা কয়েক লাখ। এই ব্র্যাকেটেই প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় শ্রমিক অধিকার কার্যত উপেক্ষিত হলো। কারণ আইন সংশোধনের পর কবে বিধি হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।"
সিবিএ হবে শ্রমিকদের ভোটে
বর্তমান আইনে কোনো কারখানায় একটি ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে সেটিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সেখানে শ্রমিকদের ভোটের প্রয়োজন হয় না।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো কারখানায় একটি ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও শ্রমিকদের 'হ্যাঁ' বা 'না' ভোটের মাধ্যমে সেটি সিবিএ হিসেবে নির্ধারিত হবে।
অন্যদিকে, যেসব কারখানায় একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন আছে, সেখানে শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে যে ইউনিয়ন সর্বাধিক ভোট পাবে, সেই ইউনিয়ন সিবিএ গঠন করতে পারবে।
শ্রম আইন অনুযায়ী, মালিকপক্ষের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় ও দরকষাকষিতে আইনগত ক্ষমতা শুধুমাত্র সিবিএর হাতে থাকবে।