শ্রম আইন সংশোধন: ২০ জন শ্রমিক হলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে, শ্রমিকদের 'কালো তালিকাভুক্তি' নিষিদ্ধ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে ২০ জন শ্রমিক থাকলেও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। এছাড়া বেশ কিছু নতুন খাতকে এর আইনি সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।
শ্রমিকদের 'ব্ল্যাক লিস্ট' করার যে চর্চা রয়েছে—যার মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কর্মীদের ভবিষ্যতে চাকরি পেতে বাধা দিতেন—তা সম্পূর্ণ বেআইনি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই সংশোধিত আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক রয়েছে এমন কারখানায় অন্তত ২০ জন শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ৩০১ থেকে ১ হাজার শ্রমিক রয়েছে এমন কারখানায় ৪০ জন শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ১ হাজার ১ থেকে ৩ হাজার শ্রমিকের কারখানায় ৩০০ জন এবং ৩ হাজার ১ বা এর বেশি শ্রমিকের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে অন্তত ৪০০ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে।
তিনি বলেন, একটি কারখানায় সর্বোচ্চ পাঁচটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।
শ্রম অধিকারকর্মীরা এই সংশোধনকে স্বাগত জানালেও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য আগের ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতির যে শর্ত ছিল, তা তুলে দেওয়ায় নিয়োগকর্তাদের সংগঠনগুলো আপত্তি জানিয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত শ্রম আইনে মোট ১৮৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তাদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন অথবা শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, নতুন শ্রম আইনটি শ্রমের সংজ্ঞাকে অনেকটাই বিস্তৃত করেছে। এর ফলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, গৃহকর্মী ও সমুদ্র খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মতো যেসব শ্রেণি আগে বাদ পড়েছিল, তারা এখন অন্যান্য শ্রমিকের মতোই সমান আইনি অধিকার ও সুরক্ষা ভোগ করবে।
এদিকে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান টিবিএসকে বলেন, 'এক হাজার শ্রমিকের কারখানায় যদি ৪০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ট্রেড ইউনিয়ন সংস্কৃতি নষ্ট হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার বিদেশিদের মন রক্ষা করতে গিয়ে এক্ষেত্রে অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তারা (বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার) চলে যাবে, কিন্তু দেশকে বিপদে ফেলে যাবে।'
তবে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক, শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার এই সংস্কারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মনিটরিং শক্ত হলে এবং এই আইন সম্পর্কে মালিক ও শ্রমিকের সমান ধারণা থাকলে এতে (২০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ) ক্ষতির কিছু দেখি না।'
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ইউনিয়ন গঠনের জন্য আগের ২০ সম্মতির শর্তটি তুলে দেওয়ার পাশাপাশি শিল্প খাতে অস্থিরতা রোধে অবশ্যই কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।
