২০ শ্রমিকেই করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন; গেজেট প্রত্যাখ্যান পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের
মালিক পক্ষের ব্যাপক আপত্তি সত্ত্বেও কলকারখানার কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক একত্রিত হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রি করার আবেদন করতে পারবেন। তাছাড়া কোনো কারখানায় শ্রমিকদের মোট সংখ্যা অনুযায়ী কতজন মিলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আবেদন করতে পারবে সে বিষয়েও অধ্যাদেশে বলে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুসারে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০০ জন পর্যন্ত হলে ন্যূনতম ২০ জন; ৩০১ থেকে ৫০০ জন হলে ৪০ জন; ৫০১ থেকে ১৫০০ জন হলে ১০০ জন; ১৫০১ থেকে ৩০০০ জন হলে ৩০০ জন; এবং ৩০০১ জন থেকে তার চেয়ে বেশি হলে ৪০০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।
বর্তমান শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো কারখানার ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়। শ্রম আইন সংশোধন করে এই বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। আইন সংশোধনের ফলে সর্বনিম্ন ২০ জন শ্রমিক মিলেও ট্রেড ইউনিয়নের গঠনের পথ তৈরি হলো।
গেজেট প্রকাশের আগে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। শ্রম আইনকে আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্মত এবং শ্রমিক ও উদ্যোক্তা উভয় পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রাখার লক্ষ্যে এটি সংশোধন করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন,'শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইনটি যুগান্তকারী। আইএলও-এর কমিটি অব এক্সপার্টসের সুপারিশ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও রাষ্ট্রের মতামত এবং ত্রিপক্ষীয় কমিটির (শ্রমিক-মালিক-সরকার) আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধনগুলো করা হয়েছে।'
জানা গেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ কনভেনশন স্বাক্ষর করেছে। গত ২২ অক্টোবর এই কনভেনশন স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আগামী ১৮ তারিখ শ্রম উপদেষ্টা জেনেভা যাচ্ছেন আইএলওর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে। পাশাপাশি আগামী ৪ ডিসেম্বর আইএলও কনভেনশন স্বাক্ষর উদযাপন করবে সরকার। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এজন্য অনুষ্ঠান আয়োজনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংশোধিত শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও নাবিকদের শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে তারা শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন। নন-প্রফিট সংস্থার ক্ষেত্রেও শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে। শ্রমিকদের ব্ল্যাক লিস্টিং (কালো তালিকাভুক্ত করা) প্রথা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে।
একই কাজের জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বেতন বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য তহবিল গঠনের বিধান আনা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, নতুন সংশোধনীতে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াও আরও কার্যকর করা হয়েছে।
১৮ নভেম্বর গুলশানে পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের সভায় বলা হয়, শ্রম বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির (টিসিসি) যৌথ সভায় গ্রহণকৃত সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ধারা টিসিসি-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এই সংশোধিত আইন প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, 'সরকার নিজেদের খেয়ালমত শ্রম আইন সংশোধন করেছে, যা শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা।'
