গ্রিসে ১৩ ঘণ্টা কর্মদিবস চালুর বিতর্কিত আইন পাশ; তীব্র বিরোধিতা, দেশজুড়ে ধর্মঘট

তীব্র বিরোধিতা ও দেশজুড়ে ধর্মঘটের মধ্যেই গ্রিসের পার্লামেন্ট ১৩ ঘণ্টা কর্মদিবস চালুর বিতর্কিত শ্রম আইন পাস করেছে। দেশটির সরকার বলছে, এ আইন দেশের শ্রমবাজারকে আধুনিক করবে। তবে বিরোধী দল সিরিজা এই বিলকে 'অমানবিক আইন' বলে অভিহিত করেছে। খবর বিবিসি'র।
নতুন আইনে বছরে সর্বোচ্চ ১৫০ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪০ ঘণ্টার সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা অপরিবর্তিত থাকবে। সরকার বলছে, অতিরিক্ত কর্মদিবস সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক, শুধু বেসরকারি খাতেই প্রযোজ্য এবং বছরে সর্বোচ্চ ৩৭ দিন পর্যন্ত কার্যকর হতে পারবে।
বৃহস্পতিবারের (১৬ অক্টোবর) ভোটে ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থী নিউ ডেমোক্রেসি দলের সংসদ সদস্যরা নতুন এই আইনের পক্ষে ভোট দেন। প্রধান বিরোধী দল মধ্য-বামপন্থী পাসোক দল বিপক্ষে ভোট দেয়, আর বামপন্থী সিরিজা দল ভোটদানে বিরত থাকে।
চলতি মাসে এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে দুইবার সাধারণ ধর্মঘটের দাক দেয় শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। এসব ধর্মঘটে গণপরিবহন ও সরকারি সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
শ্রমমন্ত্রী নিকি কেরামস আইনটির পক্ষ নিয়ে বলেন, 'নতুন সংস্কার গ্রিসের শ্রম আইনকে আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে।' তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
সরকার জানায়, নতুন আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা চাইলে একই প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে পারবেন এবং সে সময়ের জন্য ৪০ শতাংশ বেশি মজুরি পাবেন। একই সঙ্গে, অতিরিক্ত কাজ করতে অস্বীকার করায় কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না।
সরকার আরও বলেছে, এই আইন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী, সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা গড়ে ৪৮ ঘণ্টা (অতিরিক্ত কাজসহ), তবে তা ১২ মাসের মধ্যে নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করা যায়।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এই আইন শ্রমিকদের একাধিক খণ্ডকালীন চাকরির বদলে একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কাজের সুযোগ দেয়। তবে তাদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি স্বেচ্ছামূলক।
কিন্তু বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, সরকার শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করছে এবং দেশকে 'মধ্যযুগে' ঠেলে দিচ্ছে। তাদের মতে, গ্রিসের শ্রমিকরা ইতোমধ্যেই ইউরোপের অধিকাংশ দেশের তুলনায় বেশি সময় কাজ করেন। অথচ তাদের আয় কম এবং জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হয়।
সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন এডিইডিওয়াই বলেছে, এটি আসলে 'আট ঘণ্টা কর্মদিবসের বিলোপ, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের ধ্বংস, এবং অতিরিক্ত শ্রমের বৈধতা প্রদান।'
এর আগে ২০২৪ সালে গ্রিস কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে ছয় দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করেছিল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে। ওই বছর জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নতুন আইনে কর্মীদের সাপ্তাহিক কাজের সময় ৪০ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গ্রিসে সাপ্তাহিক গড় কর্মঘণ্টা ছিল সবচেয়ে বেশি— ৩৯ দশমিক ৮ ঘণ্টা। এরপরই রয়েছে বুলগেরিয়া (৩৯ ঘণ্টা), পোল্যান্ড (৩৮ দশমিক ৯ ঘণ্টা) ও রোমানিয়া (৩৮ দশমিক ৮ ঘণ্টা)। সবচেয়ে কম কর্মঘণ্টা ছিল নেদারল্যান্ডসে— ৩২ দশমিক ১ ঘণ্টা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে গ্রিসে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ছিল মাসে ৯৬৮ ইউরো (১,১২৭ ডলার), যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক সংকটের সময় ২৮ শতাংশে পৌঁছানো গ্রিসের বেকারত্বের হার ২০২৫ সালের আগস্টে নেমে এসেছে ৮ দশমিক ১ শতাংশে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেকারত্বের গড় হার ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০১৮ সালে এক দশকের ঋণসংকট শেষে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে গ্রিস এগোলেও, দেশটির মজুরি ও জীবনমান এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিম্নতম পর্যায়ে রয়ে গেছে।