বেতন নিয়ে বিরোধ: সরকারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ৫ দিনের ধর্মঘটে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা
বেতন-ভাতা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে পাঁচ দিনের ধর্মঘটে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডের রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা।
বুধবার সকাল সাতটা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হবে। কর্মবিরতি চলবে আগামী সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত।
ইংল্যান্ডের চিকিৎসাসেবা কর্মীদের প্রায় অর্ধেকই হলেন এসব চিকিৎসক। আগে তাদের 'জুনিয়র ডক্টর' হিসেবে অভিহিত করা হয়। সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এই কর্মসূচির ডাক দিলেন তারা। বেতন-ভাতা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে বিরোধের জেরে চলতি বছর বেশ কয়েকবার ধর্মঘটে গেছেন তারা।
ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) এক অনলাইন জরিপে সদস্যরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পক্ষে ভোট দেওয়ার পরই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বিএমএর রেসিডেন্ট ডক্টরস কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাক ফ্লেচার এক বিবৃতিতে বলেন, 'হাজার হাজার চিকিৎসক একজোট হয়ে সরকারের দেওয়া প্রস্তাবটিকে 'না' বলেছেন।' কাজের পরিবেশ নিয়ে সরকারের সর্বশেষ প্রস্তাবটি চিকিৎসকরা প্রত্যাখ্যান করলেও সমস্যার সমাধানে ইউনিয়ন এখনো আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানান ফ্লেচার।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এই সপ্তাহে ধর্মঘটের কোনো প্রয়োজন নেই। এটি রোগীর নিরাপত্তার প্রতি বিএমএর চরম অবহেলারই প্রমাণ।' এই কর্মসূচিকে 'স্বার্থপর, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক' বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
ফ্লুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বিএমএকে ধর্মঘটের সময় পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল সরকার।
সরকারি তথ্য বলছে, ডিসেম্বরের শুরুতে ইংল্যান্ডে ফ্লুজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তির হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৬৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, যা বছরের এই সময়ের জন্য রেকর্ড।
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পুরো ইউরোপজুড়েই এবার ফ্লুর তীব্র প্রকোপ দেখা যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বিএমএ জানিয়েছে, তাদের ৫০ হাজারেরও বেশি সদস্যের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ভোটে অংশ নেন। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গত বুধবার সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে নতুন করে বেতন বাড়ানোর কোনো শর্ত ছিল না। অথচ লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিএমএ বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করে আসছে। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্ট্রিটিং চিকিৎসকদের ২২ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু ইউনিয়ন দাবি করেছিল ২৯ শতাংশ।
চলতি বছরের শুরুতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছিল। তবে বিএমএ বলছে, দীর্ঘদিনের মুদ্রাস্ফীতির কারণে চিকিৎসকদের প্রকৃত আয় কমেছে। তাই তারা ২০০৮-২০০৯ সালের সমপরিমাণ বেতন কাঠামোয় ফিরে যাওয়া বা 'ফুল পে রেস্টোরেশন' দাবি করছেন।
